রোমহর্ষক ষড়যন্ত্র, ধারাবাহিক খুন নিয়ে “কালিম্পং ক্রাইমস”, শীঘ্রই Klikk-এ

পাহাড় আর রহস্য এক আলাদাই জুটি, এরা একসাথে মিললেই সৃষ্টি হয় অনবদ্য কিছু। আমরা পূর্বেও পাহাড়ে অনেক রহস্যের গল্প দেখেছি। তবে এ গল্প বেশ খানিক আলাদা। এই গল্প বা সিরিজের নাম হল “কালিম্পং ক্রাইম্স”। যা খুব শীঘ্রহি আগামী ৬ই আগস্ট মুক্তি পেতে চলেছে Klikk-এ। এই সিরিজের পরিচালক তপন সাহা। যখন থেকে এই সিরিজের ট্রেলার মুক্তি পেয়েছে তখন থেকেই কিন্তু দর্শক মহলে বেশ সাড়া পড়ে গেছে। ট্রেলার দেখে সেইভাবে কিছুই কিন্তু আন্দাজ করা যাচ্ছে না। আর তাই কৌতূহলের মাত্রাও ছাড়াচ্ছে। এই সিরিজে রয়েছেন এক ঝাঁক প্রখ্যাত ও প্রতিভাবান, অভিনেতা-অভিনেত্রী। এছাড়া এটি অভিনেত্রী দেবলীনা দত্ত ও সৃজনী মিত্রের প্রথম ওয়েব সিরিজ। যেহেতু গল্পের পল্ট পাহাড়কে ঘিরে তাই আশাও অনেকটাই ঘিরে রয়েছে এই ওয়েব সিরিজ টিকে ঘিরে।

এবারে যদি সিরিজের গল্পের বিষয়বস্তু নিয়ে বলতে হয়, সেক্ষেত্রে বলা ভালো এটি একটি রোমহর্ষক ষড়যন্ত্র, ধারাবাহিক খুন ও তার সুত্র অনুসন্ধান মূলক সিরিয়াল কিলিং- এর তদন্ত এর কাহিনী। আর এই তদন্তের দায়ভার কিন্তু একজন মহিলা গোয়েন্দার উপর। আমরা অবশ্য বাংলাতে খুব একটা বেশি মহিলা গোয়েন্দা চরিত্র পাইনি, সেক্ষেত্রে এটি আকর্ষণের অন্যতম আর একটা বিষয় বলা বাহুল্য।

কালিম্পং ক্রাইমস মূলত একটি সিনেমা তৈরির শুটিং-এর গল্পের প্রেক্ষাপটে, অন্তর্নিহিত আর একটি ‘গল্প’। সেখানে ঘটনাকে কেন্দ্র করেই এই গোটা সিরিজটি। গল্পের শুরু, একটি সিনেমার শুটিং দলের কালিম্পং পৌঁছানো নিয়ে। সেখানে মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্যে ঘেরা কালিম্পংয়ের কুয়াশাচ্ছন্ন ডেলো’তে একটি পুরানো ব্রিটিশ ট্যুরিস্ট লজ গল্পটির প্রাণকেন্দ্রে। যেখানে প্রখ্যাত অভিনেতা এবং কলাকুশলী সহ একটি চলচ্চিত্র প্রযোজনা ইউনিট এসে পৌঁছায়। আর সেখানেই একে একে মূল গল্পের বিভিন্ন চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ কৌতূহলজনকভাবে চোখে পড়ে ।

এই কাহিনীর দলে রয়েছেন ২ জন নায়িকা, একজন লম্পট প্রযোজক, প্রযোজকের এক বখাটে ভাই, একজন কেতাদূরস্ত নায়ক, একজন বেপরোয়া সিনেমাটোগ্রাফার, একজন বদ-মেজাজী পরিচালক, একজন ম্যানেজার, একজন স্ক্রিপ্ট লেখক, একজন খলনায়ক ও ২ জন সহকারী পরিচালক। যাদের চরিত্র এবং বৈশিষ্ট্যগুলি একে একে গল্পে প্রকাশ পায়। এই গল্পে রয়েছে আরও একটি চরিত্র, যিনি পেশায় একজন ডাক্তার, নাম ডাক্তার রায়চৌধুরী। তবে তিনি খানিক বিচিত্র চরিত্রের। কাহিনীতে তিনি এসে ডেলোয় পৌঁছন, যার পুরোনো দিনের অস্ত্র সংগ্রহের একটি বিশেষ শখ রয়েছে।

গল্পের শুরুতেই উত্তেজনার পারদ কিঞ্চিৎ বেড়ে যায়। যেখানে নায়ক রাহুল’কে গল্পের ভেতরে তৈরি হওয়া ছবির দুই অভিনেত্রীর সাথে, ঘনিষ্ট মুহূর্তে দেখা যায়। সেখানে প্রযোজক দয়াল এবং সায়রা নামে একজন অভিনেত্রীর মধ্যেও কুৎসিত বিবাদ শুরুর আভাস দেখতে পাওয়া যাবে, যেখানে প্রযোজক তার উপর যৌন নির্যাতন করতে উদ্যত হন। আর সেখান থেকেই শুরু হুমকির খেলা। তবে কে কাকে হুমকি দিচ্ছে বা তাদের ঘৃণার কারন কী সেই নিয়েই জাগে প্রশ্ন। তবে এর মাঝেই ঘটে এক অস্বাভাবিক মৃত্যু। প্রাথমিক স্তরে লোকাল পুলিশ তাকে আত্মহত্যার আখ্যা দিয়ে দিলেও সেখানে উপস্থিত হন নিহারিকা সেন নামে একজন গোয়েন্দা, এবং তিনি পুনরায় এই মামলার তদন্তের ভার গ্রহণ করেন। অপরদিকে পরিস্থিতি হয়ে ওঠে আরও বেশি ভয়াবহ। তৈরী হয় আশঙ্কার আভাস এবং অনুমান হতে থাকে যে হয়ত হতে চলেছে আরও এক খুন।

এদিকে পুলিশের উদ্যোগে পুনরায় এই ফাইল খোলার নির্দেশ দেওয়া হয় এবং একজন বিশেষ তদন্তকারীকে এই মামলায় নিযুক্ত করা হয়। একজন প্রখর বুদ্ধি সম্পন্না মহিলা সিআইডি অফিসার হলেন সায়নী ব্রহ্ম। যিনি পুনরায় এই পরিকল্পিত অপরাধের তদন্ত শুরু করেন। এবং ক্রমেই বুঝতে পারেন যে আসলে নিহারিকা একজন ‘ভুয়ো গোয়েন্দা’। আর এর পরেই ষড়যন্ত্রের দিকে আর একধাপ এগিয়ে যায় কাহিনীর মোড়। হটাৎ করে কেন এই নীহারিকা গোয়েন্দার ছদ্মবেশে খুনের রহস্যের সমাধান করতে আসে এই নিয়েই তারপর তৈরী হয় নানান প্রশ্ন।

তবে এরই মাঝে ঘটে যায় আরও একটি দুর্ঘটনা। নিকটবর্তী এক নদীতে একটি ভাসমান মৃতদেহ হিসাবে পাওয়া যায় ডাক্তারের লাশ। এই ঘটনায় পুরো ইউনিটের সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। সিনেমাটোগ্রাফার বুবাই রাতের অন্ধকারে সন্দেহজনকভাবে ঘুরে বেড়ায়। এদিকে প্রযোজকের ভাইয়ের বিরক্তিকর এবং বিকৃত আচরণগুলি এক প্রকারে তাকে মূল সন্দেহভাজন বলে চিহ্নিত করে ফেলে। আর এই সব কিছুর মাঝে তার পালিয়ে যাওয়াতে গল্পের পল্ট অন্যদিকে মোড় নেয়। সন্দেহ ও পাল্টা সন্দেহে গল্পের প্রতিটি চরিত্রেরই ‘সন্দেহজনক উদ্দেশ্য’ রয়েছে বলে মনে হতে থাকে। আর পর জিতে যায় আরও একটি মৃত্যু। আর তারপরেই প্রত্যেকটি চরিত্রের উপর উঠতে থাকে সন্দেহের আঙ্গুল। যা গল্পের দর্শককেও বারবার দ্বন্দ্বে ফেলতে বাধ্য করবে।

তাই স্বাভাবিকভাবেই দর্শকদের মনে এখন নিশ্চই প্রশ্ন উঠছে সায়নী ব্রহ্ম কি এই রহস্য মৃত্যু এবং তার কারনে সঠিক তদন্ত করতে সক্ষম হবেন? আর কেনই বা এই ধারাবাহিক হত্যাগুলি ঘটেছে? কে, বা কারা এই ভয়াবহ হত্যার ষড়যন্ত্র করছে? এই সমস্ত মৃত্যু কী কোনো ভাবে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত? কেন এই কণ্ঠস্বরগুলিকে চিরকালের জন্য নীরব করা হয়েছিল? আততায়ীর অশুভ উদ্দেশ্যগুলি কী? আর এই সব ঘটনা কেন কালিম্পং এ ? এই সকল প্রশ্নেরই উদ্ঘাটন হবে, কালিম্পং ক্রাইমসের প্রতিটি পর্বে, ধাপে ধাপে। এই পুরো সিরিজটিই কালিম্পংয়ের কুয়াশাচ্ছন্ন পর্বতমালা এবং অপূর্ব সুন্দর তিস্তা নদীকূলে চিত্রায়িত। সুতরাং গল্পে রহস্যের সাথে আমরা আনন্দ উপভোগ করতে পারবো সেখানের মনোরম পরিবেশের। আশা করা যাচ্ছে গল্পের শেষ মুহূর্ত অবধি বজায় থাকবে দর্শকদের টানটান উত্তেজনা এবং গভীর আকর্ষণ।

“কালিম্পং ক্রাইম্স” এর পরিচালক – তপন সাহা। মূখ্য সহকারী পরিচালক অনিমেষ তরফদার। সহকারী পরিচালনার টীম এ আছেন রূপক দাস, রাজ সরকার ও রাজ কুমার বর্মন। কালিম্পং এর দারুন সব চিত্র এবং রোমাঞ্চকর সকল দৃশ্যকে ফুটিয়ে তুলেছেন সিনেমাটোগ্রাফার অঙ্কিত সেনগুপ্ত। গল্প ও চিত্রনাট্য অমিতাভ ভট্টাচার্য। এডিটর কৌস্তুভ সরকার। পোশাক মেঘা চক্রবর্তী। বি.টি.এস এবং ফটোগ্রাফি পার্থ প্রতিম ব্যানার্জি এবং রানা বসু ঠাকুর। সিরিজে সিআইডি তদন্তকারী সায়নী ব্রহ্ম এর চরিত্রে অভিনয় করছেন অভিনেত্রী দেবলীনা দত্ত। ডাক্তার রায়চৌধুরীর চরিত্রে, অর্জুন চক্রবর্তী। নায়িকা সায়রার চরিত্রে পায়েল মুখার্জি। মল্লিকার চরিত্রে আছেন সৃজনী মিত্র মুস্তাফি। নায়ক রাহুলের চরিত্রে ত্রম্বক রায়চৌধুরী। সিনেমাটোগ্রাফার বুবাই এর ভূমিকাতে রানা বসু ঠাকুর।

প্রযোজক দয়াল হলেন রাহুল বর্মন। প্রযোজকের ভাই দেব এর চরিত্রে ইন্দ্র। ইন্দ্রনীল ব্যানার্জি (লেখক)। সুমন্ত মুখার্জি (নায়ক শেখর)। দেব কুমার মিত্র (পরিচালক পুলক)। বান্টী গোস্বামী (প্রোডাকশন ম্যানেজার বলরাজ)। অমিত শ্রীমণি (পুলিশ অফিসার)। পাপিয়া শেঠ (রিসেপসনিস্ট)। অশোক চৌধুরী (কন্ট্রাক্ট কিলার ইকবাল)। রাজ কুমার বর্মন (সহকারী পরিচালক)। সহেলী মজুমদার (সহকারী পরিচালক। সুতরাং একঝাঁক তারকাদের দল, কালিম্পং এর অভূতপূর্ব সব দৃশ্য, ষড়যন্ত্র, ধারাবাহিক খুন, রহস্যে ভরা এই সিরিজ “কালিম্পং ক্রাইম্স”।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x