গলার স্বর আমাদের সকলের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এই গলার স্বর দিয়েই অনেকে আমাদেরকে চেনেন। কিন্তু এই গলার স্বর কী সবসময় মর্যাদা পায় ? হ্যাঁ যাঁরা গান করেন তাঁদের অনেকেই যথাযথ মর্যাদা পান, কিন্তু যাঁরা ভয়েস আর্টিস্ট বা ডাবিং করেন, কার্টুন চরিত্র গুলিতে নিজেদের গলার স্বর দেন ! তাঁরা কী সত্যিই সেই মর্যাদা কখনও পান ? তাঁদের স্ট্রাগেল কী কেউ দেখতে পায় ? কারন তাঁরা তো ক্যামেরার পিছনে থাকে, তাই তাদের কোনো পরিচিতি নেই। আর সেই নিয়ে কিন্তু পরিচালক অর্নব দে আসতে চলেছেন তার আগামী শর্ট ফিল্ম “স্বর” কে নিয়ে। ফিল্মটি Reeflix Originals এর। এটি প্রযোজনা করেছেন অনুষ্কা সরকার। পরিচালক হিসাবে এটি অর্নব দে-র প্রথম সিনেমা। তাই সিনেমা মুক্তি পাওয়ার আগেই, সিনেমা নিয়ে নানান আড্ডা মারতে আমরা সরাসরি চলে যাই পরিচালক অর্নব দে-র কাছে।
গল্পের বিষয়বস্তু কী জিজ্ঞাসা করলে, অর্নব দা আমাদেরকে জানান, “গল্পটি মূলত দুটি চরিত্রকে ঘিরে। বাবা এবং তাঁর ছেলে। এখানে বাবা একজন ভয়েস আর্টিস্ট এবং ছেলে মিউজিক জগতের। যেখানে ছেলের অল্প বিস্তর পরিচিতি থাকলেও বাবা কেবল একজন কেবল ভয়েস আর্টিস্ট হয়েই চিরদিন থেকে গেছেন, তিনি কোনো পরিচিতি পাননি, বা তাঁর কোনো নাম নেই ইন্ডাস্ট্রিতে। আর সেই কারনেই বাবার উপর ক্ষুব্ধ ছেলে, প্রায়ই তাদের মধ্যে চলতে থাকে কোনো না কোনো বিবাদ। এছাড়া সত্যি বলতে আমাদের এই ইন্ডাস্ট্রিতে তো যাঁরা ভোকাল আর্টিস্ট হন তাঁদের কোনো পরিচিতি নেই। একপ্রকার বলা চলে তাদের গলার স্বর এর কেবল ব্যবহার করা হয়, তারপর আর তাঁদেরকে কেউ চেনেন না, তাঁদের কোনো নাম হয় না বাস্তব দুনিয়াতে। সেটাই এই গল্পের মধ্যে তুলে ধরা হয়েছে। তবে হ্যাঁ এটা বলবো যে শেষের অংশ সত্যিই দর্শককে ভাবিয়ে তুলবে। এখানে যিনি বাবার ভূমিকায় অভিনয় করছেন তিনি শেষে বলে যাবে যে, আমরা যাঁরা আর্টিস্ট তারা কেবল নিজের জীবন অতিবাহিত করার জন্যেই এই কাজটা করি না। আসলে যাঁরা শিল্পী হন, তাঁদের কাছে শিল্পের কোনো জাতি, ধর্ম এর ভেদাভেদ হয় না। আমাদের কাছে শিল্প সবার আগে প্রাধান্য পায়। তবে শেষ পর্যন্ত কী হয় তা জানতে তো অবশ্যই দর্শকদের কে সিনেমাটি দেখতে হবে।”
এমন একটি বিষয়ের উপর সিনেমা বানানোর চিন্তা ভাবনা কবে, কীভাবে পরিচালকের মাথায় আসে, সেই বিষয়ে পরিচালক অর্নব দে আমাদের জানান, “যখন আমি ইন্ডাস্ট্রির বাইরে ছিলাম তখন প্রায় ৩-৪ বছর ধরে এখানে প্রবেশ করার জন্যে স্ট্রাগেল করছিলাম, কিন্তু এখানে প্রবেশ করার পর আমি আরও অনেক কিছুই জানতে পারি, বুঝতে পারি। আসলে এখানে নিজেকে সারভাইভ করানোটা সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আর এই গল্পটির অনুপ্রেরণা বা চিন্তা ভাবনা আসে বলতে, আমার এক বন্ধুর দাদা ভয়েস ওভার আর্টিস্ট, তো তার থেকে বেশ কিছু গল্প শুনি, এছাড়া আমি নিজেও অনেকটা নিজের অভিজ্ঞতা থেকে এই বিষয়টাকে দেখি আর সেখান থেকেই এই বিষয়ের উপর সিনেমা বানানোর কথা আমি ভাবি। ”
সিনেমার ষ্টার কাস্ট নিয়ে পরিচালক জানান, “সিনেমাতে মুখ্য দুটি চরিত্রে অভিনয় করছেন প্রদীপ মুখার্জী এবং অনিন্দ্য চ্যাটার্জী। এখানে অনিন্দ্য দা ছেলের ভূমিকাতে এবং প্রদীপ জ্যেঠু বাবার ভূমিকাতে রয়েছেন। প্রদীপ মুখার্জীকে হয়তো অনেকেই চেনেন না তবে উনি সত্যজিৎ রায়ের আমল থেকে সিনেমা করছেন এবং সত্যজিৎ রায়ের সিনেমাতে অভিনয় করেছেন। তো উনি তো একজন লিভিং লেজেন্ড। আর ওনার সাথে আমি কাজ করতে পেরে খুব খুশি এবং নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে করি। আর অনিন্দ্য দা আমার আশাতীত কাজ করেছে। এছাড়া বলবো আরও একটি ছেলের কথা, সে হল শুভ্রদীপ দত্ত। এই সিনেমাতে তার একটি বিষেশ ভূমিকা আছে সেটা বলতে পারি। কারন এই ছেলেটি হবে গল্পের টার্নিং মোড়। যে আদতে অনেক কিছু শেখাবে, অনেক কিছু অনুভব করাবে অনিন্দ্য দা চরিত্র ঝন্টুকে।”
একজন পরিচালক হিসাবে এটি অর্নব দে-এর প্রথম ছবি। প্রথমবার পরিচালক হিসাবে তাঁর অভিজ্ঞতা কেমন ছিল, তা নিয়ে আমাদেরকে জানান, “একজন পরিচালক হিসাবে আমার যাত্রা বেশ ভালো ছিল। তবে একটু চাপেরও ছিল বলতেই হয়। আসলে it is tough to handle the floor. কিন্তু আমার সাথে যারা ছিলেন তারা খুবই ভালো ছিলেন। ওখানে বেশিরভাগ আমার থেকে এক্সপেরিয়েন্স, তাই আমি একটু চাপের মধ্যেই ছিলাম। কিন্তু আমার অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর শিলাদিত্য গুহ, ডিরেক্টর অফ ফটোগ্রাফির দায়িত্বে থাকা অনুভব চ্যাটার্জী এছাড়া আরও যাঁরা আমার সাথে ছিলেন তারা এতটাই ভালো ছিল যে আমার কাজ করতে খুব সহজ এবং সুবিধা হয়েছিল। আর যদি কাস্ট এর সাথে কাজের এক্সপেরিয়েন্স কেমন ছিল বলতে হয় তাহলে বলবো প্রথম যেদিন আমি সেট এ পা দিয়েছিলাম খুব ভয়েই ছিলাম কিন্তু প্রদীপ জ্যেঠু এবং অনিন্দ্য দা দুজনেই আমাকে খুব সাহায্য করেছে আমাকে একবারও এটা বুঝতে দেয়নি যে এটা আমার প্রথম কাজ বা তারা আমার থেকে বেশি এক্সপেরিয়েন্সড। অনিন্দ্য দা এর একটা বিষয় আমার খুব ভালো লাগতো যে, উনি সবসময় একটা শর্ট দেওয়ার পর জিজ্ঞাসা করতো শর্টটা কেমন হলো, আরো একবার দিলে ভালো হবে কী ? আর এই জিনিস গুলি আমাকে খুব মোটিভেট তো করেছে এবং সাহায্য ও করেছে। আর প্রদীপ জ্যেঠু কে নিয়ে কী বলবো, He is a Sweetheart. ওনার তো বয়স কম হয়নি, কিন্তু উনি এতো সাহায্য করেছেন যে আমার কাজটাকেই খুব সহজ করে তুলেছে তাই ওভার অল যদি বলতে হয় একজন পরিচালক হিসাবে আমার প্রথম কাজ এর অভিজ্ঞতা খুব ভালো।”
এই সিনেমার বিশেষ আকর্ষণ কী জানতে চাইলে অর্নব দা জানান, “দেখো এই সিনেমাটি কিন্তু আমি বলতে পারবো না সবার জন্যে। অবশ্যই আমি চাই যে সিনেমাটি সকলে দেখুক কিন্তু কতজন এটার সাথে রিলেট করতে পারবে তা আমি বলতে পারবো না। তবে আমার টার্গেট হল শিল্পীরা। আর সেই সব মানুষ যাঁরা এখনও স্বপ্ন দেখেন, নিজের শিল্পসত্ত্বা কে বাঁচিয়ে রাখতে এখনও স্ট্রাগেল চালিয়ে যাচ্ছেন। টাকা বর্তমান দিনে আমাদের সকলের কাছে খুবই জরুরী, সেটা ছাড়া আমরা সকলেই অচল, কিন্তু সেই দিকটাকে বজায় রেখে নিজের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে আজও যাঁরা স্ট্রাগেল করে যাচ্ছেন তাঁদের জন্যে আমার এই সিনেমা এবং তারা বেশি করে এই সিনেমার সাথে রিলেট করতে পারবেন। তবে আশা করব সকল রকম দর্শকরা যাতে এই সিনেমাটি দেখেন।”
এই শর্ট ফিল্মটি কবে প্রকাশ পাবে তা জানতে চাইলে, অর্নব দা বলেন, “এখনও আমি সেটা ঠিক জানি না। এখন তো সবে পোস্টার প্রকাশ পেয়েছে। প্রমোশন পর্ব শুরু হল। তবে এটি রিলিজ কবে হবে সেটা নির্ভর করছে Reeflix Channel এর উপর। তবে আশা করা যাচ্ছে হয়ত এই মাসের শেষেই। কিন্তু এটা এখনও কনফার্ম কিছু না ”
এরপর যখন তাঁর আগামী প্রোজেক্ট নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হয় তখন অর্নব দা জানান, এই মুহূর্তে তার কোনো আগামী কাজ নেই, যেটা নিয়ে এখনই কথা বলা যাবে। তবে হ্যাঁ একটা লেখা চলছে, আর সেটা সম্পূর্ণ হলেই বোধ হয় বলা যাবে যে কোনো নতুন কাজ আসছে। তবে এই মুহূর্তে কাজ হল ‘স্বর’, সুতরাং আমি চাইবো সবাই “স্বর” দেখুন, আর তাকে অনেক ভালোবাসা দিন। “