সম্পর্ক যদি আবেগের অপর নাম হয় তবে সেটা কি খুব ভুল হবে? সম্পর্ক আবার আবেগ এর অপর নাম কি করে হবে? এটাতো বাস্তবসম্মত নয়। হ্যাঁ কথাটা ঠিকই। অনেকেরই সম্পর্কই ব্যক্তিগত ইগো, অভিমানে, ভুল বোঝাবুঝির জন্য ভেঙে যায়।এক ছাদের তলায় থেকেও শত শত মাইল দূরে করে দেয়, মানুষকে একা করে দেয়। সে তার ইগো স্যাটিসফ্যাকশন এর জন্য, তার একাকীত্ব থাকা সত্বেও তার মনের যন্ত্রনা, ভালোবাসা না পাওয়ার ব্যাকুলতাকে সে আড়াল করতে থাকে। পরাশ্রয়ী উদ্ভিদের মতন কাউকে খুজতে থাকে, আঁকড়ে বাঁচার জন্য। সবক্ষেত্রে সেই সিদ্ধান্ত সঠিক হয় না। কিছু না বলা কথা অনেক সময় কাছের মানুষ চলে যাওয়ার পরও অব্যক্ত থেকে যায় এবং এই যন্ত্রণায় থেকেই সৃষ্টি হয় হ্যালুসিনেশন। মানুষ যতই দেখানোর চেষ্টা করো যে সে ঠিক আছে কিন্তু বাস্তবে সে একেবারেই ঠিক নেই। না বলা কথাগুলো তার বুকে শাশ্বত পাথরের মতন জাঁকিয়ে বসে থাকে যা সে চেষ্টা করেও সরাতে পারেনা। প্রতিটা মুহূর্ত তাকে কুরে কুরে খায়। দুই প্রজন্মের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি, দৃষ্টিভঙ্গির সাপেক্ষে সময়ের চরম নির্মমতা সম্পর্কের দ্বন্দ্বে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে।

পরিচালক প্রিয়ম চন্দের স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি ‘ইন দ্য এন্ড’ ছবিটি দেখলাম। এই ছবিটি দেখে সম্পর্কের জটিল রসায়ন সম্পর্কে একটা ধারণা হল। ছবিটি যেভাবে এডিট করা হয়েছে তা কোথায় অসাধারণ। এই স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবিটির আবহসংগীত ছবিটির দৃশ্যায়নের সঙ্গে এতটাই সুন্দরভাবে মিশে গেছে যে ছবিটি সত্যিই অন্য এক মাত্রায় গিয়ে পৌঁছেছে।
এবার আসা যাক স্বল্পদৈর্ঘ্যর ছবিটির অভিনেতা-অভিনেত্রীদের পারফরম্যান্সের কথায়- বলে রাখা ভালো এই স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবিটির মূল গল্প মূলত একজন বাবা (যে চরিত্রে ‘ফুডকা’ ইন্দ্রজিৎ লাহিড়ী অভিনয় করছেন) এবং তার মেয়ে, (যে চরিত্রটিতে অস্মিতা ভাদুড়ী অভিনয় করছেন) তাদের জটিল সম্পর্কের রসায়নের। এই স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবিটির প্রতিটি পরোতে পরোতে বাবা এবং তার মেয়ের মধ্যে পারস্পরিক ভুল বোঝাবুঝি, অভিমান, দ্বন্দ্ব খুবই সামাজিকভাবে, প্রাসঙ্গিকতার সঙ্গে, নিপুণভাবে তারা ফুটিয়ে তুলেছেন অভিনয়ের মধ্য দিয়ে।

‘ফুডকা’ ইন্দ্রজিৎ লাহিড়ী বাবার চরিত্রে খুবই সাবলীল এবং যথেষ্ট বুদ্ধিদীপ্ত ও বলিষ্ঠ। তার অভিনয় এবং সংলাপ বলার ধরন দেখে দর্শকেরা অবশ্যই মুগ্ধ হবেন। তার চাপা বেদনার অন্তর্হিত গ্লানি আপনারা তার চোখে-মুখের বুঝতে পারবেন। এ রকমের অভিনয় খুব সহজে করা সম্ভব নয়। তার মুখের গ্লানি তার মনের টানাপোড়েন,সম্পর্কের তিক্ত দ্বন্দ্ব গুলিকে আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছিল। অল্প সময়ে এরকম সুদক্ষ অভিনয় অনেকদিন পর কাউকে দেখতে পেলাম। তার জন্য ‘ফুডকা’ ইন্দ্রজিৎ লাহিড়ীকে অনেক অভিনন্দন।
একই সঙ্গে মেয়ের চরিত্রে(চরিত্রটির নাম টিনা) অস্মিতা ভাদুড়ী সাবলীল এবং নিখুঁত অভিনয় করেছেন এবং তার চরিত্রটি কে ফুটিয়ে তুলেছেন। তার চাওয়া-পাওয়ার অপূর্ণতা, বাবা মায়ের ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হওয়ার তিক্ত বেদনা, মনের মধ্যে সব সময় চলতে থাকা অন্তর্দ্বন্দ্ব বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে সাযুজ্য রেখে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।
সৌমি নন্দীর ছোট্ট একটি অভিনয় আপনাদের মনে ছাপ রেখে যাবে। তিনি অত্যন্ত নিপুণতা সাথে অভিনয় করেছেন।
এর সঙ্গে অরিজিৎ সরকারের একটা ধন্যবাদ প্রাপ্য তার কারণ তিনি যেভাবে এই দৃশ্যগুলি লেন্স বন্দী করেছেন তা ছবিটিকে একটা অন্য মাত্রা দিয়েছে।

এই ছবিটি প্রযোজনা করেছেন মেলটিং পয়েন্ট ফিল্মস এবং রুং।
এই স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবিটি ‘মেলটিং পয়েন্ট ফিল্মস’ ইউটিউব চ্যানেলে দেখতে পাবেন। ছবিটি অতি অবশ্যই একবার দেখবেন। হয়তো এই ছবিটি দেখার পর ব্যক্তিগত সম্পর্কের উপলব্ধি অনেকটা বদলে যাবে। আপনাকে নতুন করে ভাবাতে বাধ্য করবে। হয়তো বা আপনার পারিপার্শ্বিক মানুষগুলির সঙ্গে আপনার বিচ্ছিন্ন সম্পর্কের ব্যবধানটা অনেকটা কমে আসবে। নতুন করে সম্পর্ক গুলিকে গড়ে তোলার রসদ পাবেন।