‘চিরকাল আজ’ নাটকটি আপনাকে ঠিক এই রকম পরিস্থিতির সম্মুখীন করবে। এই নাটকটিতে রকেট চরিত্রে অভিনয় করেছেন আফরান নিশো এবং তিথির চরিত্রে অভিনয় করেছেন মেহজাবিন চৌধুরী।
‘স্মৃতি’ আমাদের প্রত্যেকটি মানুষের কাছেই এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভালোবাসার সুন্দর সুন্দর মুহূর্ত স্মৃতি হয়ে আমাদের আজীবন হাসায় মন ভালো করে দেয়। কিন্তু সেই স্মৃতি যদি আমাদের জীবন থেকে হারিয়ে যায় তখন কি ঘটবে?
পরিচালক ভিকি জাহেদ পরিচালিত এবং আরটিভি প্রযোজিত ঈদ স্পেশাল নাটক ‘চিরকাল আজ’ এক অসম্ভব সুন্দর নাটক।
আপনার ভালোবাসার মানুষ যখন আপনার চোখের সামনেই মৃত মানুষসম তখন আপনার অবস্থা কিরূপ হবে? আমরা সকলেই চাই আমাদের প্রিয় ভালোবাসার মানুষটি সারা জীবন যাতে জীবিত থাকে কিন্তু সে জীবিত থেকেও যদি মৃত মানুষের মতন হয়ে থাকে বা তার চেয়েও খারাপ তখন আপনার মানসিক পরিস্থিতি কিরকম হবে?

তিথি একটি দুর্ঘটনার পর রেট্রোগ্রেড এবং ইন্টোগ্ৰেড অ্যামনেশিয়ার কবলে পড়ে। এই রোগের ফলে স্মৃতি লোপ পায় এবং নতুন ধরনের কোনো স্মৃতি তৈরি হয় না। এরপর শুরু হয় তার ভালোবাসার মানুষ রকির এবং তার সেই নিদারুণ লড়াই, তার সেই রোগের সঙ্গে। একসময় রকি এবং তিথি ভালোবাসা পরিণতি যে কি নিদারুন হয় তা আপনারাই নাটকটি দেখলে বুঝতে পারবেন।
এই নাটকটির পরিণতি দেখার পর আপনার চোখের জল আটকে রাখতে পারবেন না এইটুকু বলতে পারি।

‘রকি’র চরিত্রে আফরান নিশো অসম্ভব সুন্দর অভিনয় করেছেন তা প্রকাশ করার ভাষা আমার কাছে নেই। তার ঘটনা বর্ণনা করার ভাষাশৈলী, তার চোখ-মুখের এক্সপ্রেশন, ডায়লগ ডেলিভারি একেবারে অনবদ্য। তিনি নিজের অভিনয়টাকে যে উচ্চস্তরে নিয়ে যাচ্ছেন তার জন্য তাকে সত্যিই অন্তর থেকে গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। তার অভিনয় আপনাকে অন্য এক জগতে নিয়ে যাবে যেখানে আপনি এই নির্মম বাস্তবতা কে নিজের অন্তর থেকে অনুভব করতে পারবেন। প্রত্যেকটি চরিত্রের সঙ্গে তিনি নিজেকে যেভাবে একাত্ম করে নেন তখন তিনি আফরান নিশো থাকেন না, থাকেন রকি চরিত্রটি হয়ে আমাদের অন্তরাত্মায়। তার অভিনয় যত দেখি ততই মুগ্ধ হই। এই নাটকে তার কয়েকটি সংলাপ যেমন “মানুষ সত্যিই অদ্ভুত। কষ্ট দেওয়ার জন্য আমরা সবচেয়ে প্রিয় মানুষটাকেই বেছে নিই”।”পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজ হচ্ছে জীবিত মানুষের জন্য শোক পালন! সুখ শব্দটি মৃত মানুষের জন্য বরাদ্দ সেটা আমার তিথির জন্য প্রযোজ্য হবে কেন? কিন্তু একটা প্রশ্ন দিন রাত চব্বিশ ঘন্টা আমাকে খোঁচায়, প্রশ্নটা হল তিথি কি সত্যিই এখনো জীবিত?”

অভিনেত্রী মেহজাবিন চৌধুরী এখানে ‘তিথি’র চরিত্রে অভিনয় করেছেন। তিথির চরিত্রে মেহজাবিনের বলিষ্ঠ অভিনয় সত্যিই অনবদ্য। তিনিও প্রত্যেকটি চরিত্রের জন্য নিজেকে ভেঙ্গে, নতুন করে গড়ে তোলেন। চরিত্রের সঙ্গে নিজেকে একেবারে একাত্ম করে নেন। মেহজাবিনের অভিনয় দক্ষতার কোন তুলনা হয় না। বর্তমানে বাংলাদেশের সেরা ৫ জন অভিনেত্রীর মধ্যে তিনি অবশ্যই প্রথম সারিতে থাকবেন। তিনি প্রায় ৩ থেকে ৪ বছর ধরে বিভিন্ন চরিত্রে যে অভিনয় করেছেন তা সত্যি অসাধারণ। ‘চিরকাল আজ’ নাটকে তার চরিত্রটি তিথি তিনি যে ভাবে ফুটিয়ে চলেছিলেন তা তিনি ছাড়া অন্য কাউকে ভাবাই যায় না। আরফান নিশো এবং তার জুটির যে ম্যাজিক আমরা দেখতে পাই তা তাদের অভিনয় দক্ষতা ছাড়া কোনভাবেই সম্ভব নয়।

সবচেয়ে বেশি ধন্যবাদ দেওয়া উচিত পরিচালক এবং চিত্রনাট্যকার ভিকি জাহেদ কে এই ধরনের গল্প নিয়ে নাটক নির্মাণ করার জন্য। তিনি এত নিখুঁত এবং সুন্দরভাবে এই ধরনের জটিল রোগ নিয়ে একটি নাটক উপস্থাপিত করেছেন সত্যিই প্রশংসনীয়। এই নাটকটিতে তিনি যাদেরকে নির্বাচিত করেছেন তারা প্রত্যেকেই অনবদ্য অভিনয় করেছেন। পরিচালক অতীতেও অসাধারণ কাজ করেছেন এবং আমরা আশা রাখবো ভবিষ্যতে তিনি এই ধরনের মৌলিক এবং স্বতন্ত্র চিত্রনাট্য নিয়ে আমাদের সামনে উপস্থাপিত করবেন।রেশমার (তিথির মায়ের চরিত্র) চরিত্রে অভিনয় করেছেন গুণী শিল্পী সাবেরী আলম। এই নাটকটিতে তার অভিনয় আপনার মনে দাগ কেটে যাবে। বাংলাদেশের নাটকে তিনি অন্যতম জনপ্রিয় মুখ। তার অভিনয় দক্ষতা প্রশংসা না করে আপনি থাকতে পারবেন না। তিনি এত নিখুঁত এবং সাবলীল অভিনয় করেন যা দেখে আপনার স্বাভাবিকভাবেই প্রশংসা করতে ইচ্ছা করবে।
রেশমার (তিথির মায়ের চরিত্র) চরিত্রে অভিনয় করেছেন গুণী শিল্পী সাবেরী আলম। এই নাটকটিতে তার অভিনয় আপনার মনে দাগ কেটে যাবে। বাংলাদেশের নাটকে তিনি অন্যতম জনপ্রিয় মুখ। তার অভিনয় দক্ষতা প্রশংসা না করে আপনি থাকতে পারবেন না। তিনি এত নিখুঁত এবং সাবলীল অভিনয় করেন যা দেখে আপনার স্বাভাবিকভাবেই প্রশংসা করতে ইচ্ছা করবে।

তিথির বাবার চরিত্রে কায়েস চৌধুরী খুব সুন্দর অভিনয় করেছেন। স্বল্প চরিত্রে তার অভিনয় খুবই প্রশংসনীয়। তিনিও বাংলাদেশের বিভিন্ন নাটকে একজন জনপ্রিয় এবং পরিচিত মুখ।
এই নাটকটিতে একটি গান রয়েছে যেটি খুবই প্রাসঙ্গিক এবং আপনার মনকে প্লাবিত করে তুলবে।
সবশেষে এটুকুই বলতে পারি এই নাটকটি প্রকৃত অর্থে সার্থকতা পেয়েছে পরিচালক, অভিনেতা- অভিনেত্রীদের অসম্ভব পরিশ্রম এবং তাদের কর্মনিষ্ঠার মধ্যে দিয়ে এবং তার সঙ্গে বাস্তব মুখী, সাবলীল এবং রুচিশীল অভিনয়।