ভালোবাসার পরিধি অসীম, বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে কী বর্ডারের লাইন ?

ইংরেজিতে একটি প্রবাদ বাক্য রয়েছে, “Everything is fair in love and war”, আর এই গল্পে তো ভালোবাসা এবং যুদ্ধ দুই রয়েছে। একদিকে দুই মুলুকের মানুষের ভালোবাসা আর অপরদিকে কার্গিল যুদ্ধ। মুক্তি পেয়ে গেল ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত সিনেমা “Lines”. Voot Film Fest এ আজই মুক্তি পেয়েছে আর তার পর থেকেই এই সিনেমা পাচ্ছে বহু সাড়া। এই সিনেমার প্রথম পোস্টের লুক প্রকাশ পেয়েছিল ২০১৯ সালে ৭২তম ‘Cannes Film Festival’ এ।

আন্তর্জাতিক স্তরে এই সিনেমাটি পুরস্কৃত হয়েছে। ‘New York সিনেমাটোগ্রাফি অ্যাওয়ার্ডস’ এ “বেস্ট ফিচার ফিল্ম” পুরস্কার পেয়েছে। সাথে “Golden Eagles” এর জন্যেও কোয়ালিফাই করেছে লাইন্স। Montgomery International Film Festival (USA) তে Best Picture Category এর জন্যেও নোমিনেটেড হয়েছে। এছাড়াও এই সিনেমার অভিনেত্রী হিনা খান এই সিনেমার জন্যে Best Actress এর পুরস্কার ও পেয়েছেন। এতো গুলি আন্তর্জাতিক পুরস্কার পাওয়ার পর শেষমেশ আজ মুক্তি পায় পরিচালক Hussein Khan এর Lines.

গল্পের শুরুই হয় এখানে কার্গিল যুদ্ধ এর পরিস্থিতিতে থেকে। যেখানে বর্ডারের প্রান্তে থাকা মানুষ গুলি প্রতি মুহূর্তে নিজেদের জীবনকে হাতের মুঠোয় নিয়ে বাঁচে। কখনও বর্ডারের ধারে নিজেদের বাড়িতে আবার কখনও বা রিফিউজি দের মতো ক্যাম্পে গিয়ে থাকতে হয় তাদের। সেখানেই গল্প দেখানো হয় কাশ্মীরের এক মেয়ের তার পরিবারের। গল্পের মূল সূত্রধর নাজিয়া, যে তার বাড়ির মেয়ে না ছেলের মতো সকল দায়িত্ব পালন করে। তার ঠাকুমার বোন থাকে পাকিস্তানে। আর তাই দুই বোনকে আবার দেখা করানোর জন্যে সে খোঁজ চালায় পাকিস্তানে এবং মেলায় একসাথে। সেখানেই নাজিয়ার আলাপ হয় নূর দিদার নাতি নাবিল এর সাথে। সময়ের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় এই জুটি। কিন্তু বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় বর্ডারের লাইন। নাজিয়া ভারতে অপেক্ষা করতে থাকে নাবিল এর এবং নাবিল চেষ্টা করতে থাকে তার সঙ্গিনীকে ফিরিয়ে আনতে। বহু চেষ্টার পরেও সফল হয় না তাদের কোনো প্রচেষ্টাই। তখনই প্রশ্ন ওঠে দোষ কার ? কোন পক্ষের ? ভারত বা পাকিস্তান দুই দেশের মানুষের চলন-বলন, আদব-কায়দা সবই তো এক, তাহলে তাদের মাঝে টেনে দেওয়া হলো কেন এই রেখা ? কেন ই লাইন টেনে দিল মানুষের মাঝে ? কেন গুলি চললে একে অপরকে দোষারোপের রীতি শুরু হয় ? দশ কী সেই দুই বোনের যারা আলাদা হয়েগেছিল ? দোষ কী নাবিল আর নাজিয়ার, যারা একে অপরকে ভালোবেসেছিল ? কাহিনীতে শেষ পর্যন্ত নিজের ভালোবাসার জেরে নাজিয়া কতদূর যায় তার জন্যে তো দেখতেই হবে নাজিয়ার যাত্র, লাইন্স এ। তবে প্রশ্ন থাকছেই ভালোবাসা কী বর্ডার এর রেখাকে মানে ?

এই সিনেমাতে প্রত্যেকটি দৃশ্য খুব সুন্দর করে দেখানো হয়েছে। কাশ্মীরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেমন একদিকে তুলে ধরা হয়েছে তেমনই ঠিক কার্গিল যুদ্ধের জেরে বর্ডারের প্রান্তে থাকার মানুষের জীবনযন্ত্রণার কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে। নাজিয়া নামের একটা সহজ সরল মেয়ের কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে, যে বিবাহের আগে একটি চঞ্চল, খুশ মেজাজি সাথেই দায়িত্ববান মেয়ে আবার বিয়ের পরে একজন ম্যাচিউর লেডি। তাঁর কষ্টের সাথে যেন দর্শককেও তার যাত্রার সাথী বানাচ্ছে। নাজিয়ার ভূমিকাতে অভিনয় করেছেন অভিনেত্রী হিনা খান এবং বলা বাহুল্য তাঁর অভিনয় আরও একবার দর্শকের মন কেড়েছে। সে দর্শকের মন জয় করেছে নিজের ভালোবাসার কাহিনীকে দিয়েও। এই সিনেমাতে নাজিয়ার দাদির চরিত্রে আছেন প্রবীণ ও দক্ষ অভিনেত্রী ফারিদা জালাল জি। তাঁর অভিনয়ে মুগধ সকলে। তাঁর ইমোশান, ডায়লগ, হাসি, মজা, কষ্ট সবকিছুই দারুন ভাবে ফুটে উঠেছে। সেই সাথেই নাবিল অর্থাৎ ঋষি ভুটানির অভিনয় ও বেশ প্রশংসনীয়।

সিনেমার গল্প এবং চিত্রায়ন খুবই সোজ সরল, কিন্তু তার বিষয় ততটাই বেশি গুরুতর। সিনেমার লেখক, Kunwar Shakti Singh এবং Rahat Kazmi এর অনবদ্য লেখা এবং সিনেমার চিত্রায়ন দুই মাইল মানুষের মনে ভালোবাসাই জাগাবে কেবল। এখানে কারোর প্রতি কোনো হিংসার পরিচয় দেখানো হয়নি। তবে দেখানো হয়েছে দুই ভালোবাসার জুটির কষ্ট। বিয়ের পর তাদের আলাদা থাকতে হচ্ছে, কারন তাদের মাঝে এসেছে লাইন আর সেই লাইন, বর্ডারের লাইন। সিনেমার একটি পোস্টের শেয়ার করে অভিনেত্রী লিখেছেন, “ইমোশান কখনও পাল্টে যায় না, মাঝে বর্ডার থাকলেও। কাহিনীতে নাজিয়া বলেছে, আচ্ছা এমন কী হতে পারে না, কোনো একদিন ঘুম থেকে উঠলাম আর দেখলাম হিন্দুস্তান আর পাকিস্তানের মধ্যে কোনো রেখা নেই.আবার কী আগের মতো একসাথে থাকতে পারি না ? বহু প্রশ্ন নিয়ে, যন্ত্রনা, দুঃখ আবার অনেকটা ভালোবাসাকে ঘিরে এই গল্প। তাই গল্পের শেষ কী বা কোন লাইন এ গিয়ে শেষ হচ্ছে তার জন্যে অবশ্যই দেখতে হবে Voot Originals এ “Lines”.

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x