মানুষদের চেহারা, উচ্চতা, গায়ের রঙ, চুলের রঙ বা আচার-আচরণেও এত পার্থক্য আসে কিভাবে!!
মানুষ সহ সব জীবের নিজেদের মধ্যেই এত পার্থক্যের কারণ হল “ জিনগত প্রকরণ”
মানুষের জিনগত প্রকরণ কী?
মানুষের নিউক্লিয়ার জিনোমটি ৩০৫৪৮১৫৪৭২ জোড়া রাসায়নিক অক্ষর দিয়ে তৈরি, যা আমাদের চোখের রঙ, চুলের রঙ থেকে শুরু করে উচ্চতা, গায়ের রঙ বা আচার-আচরণ থেকে রক্তের গ্রুপ, জেনেটিক রোগ বা কোন বিশেষ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা পর্যন্ত সমস্ত কিছুকে নিয়ন্ত্রণ করে ।
এছাড়াও আছে ১৬৫৬৯ জোড়া মাইট্রোকন্ড্রিয়াল ডিএনএর রাসায়নিক অক্ষর যা আমরা শুধুমাত্র মায়ের থেকে পাই।
যে কোন দুটি মানুষের মধ্যে জেনেটিক কোড নূন্যতম ০.১% পৃথক হয়, এটাকেই জেনেটিক প্রকরণ বলে, তবে মুছে যাওয়া ও নূতন ঢোকা কোডগুলি বিবেচনায় আনলে পার্থক্য ০.৬% হয়ে দাঁড়ায়। ২০১৫ সালের হিসাবে দুটি ব্যক্তির জিনোমের মধ্যে সাধারণ পার্থক্য ধরা হয়েছিল ২০০০০০০ জোড়া জেনেটিক কোড।
এমনকি অভিন্ন যমজদের ক্ষেত্রেও গড়ে ৫.২ টি পার্থক্য থাকে, তাই অভিন্ন যমজরাও কখনই একরকম নয়।
সাম্প্রতিক গবেষণায় পাওয়া গেছে প্রতিটি মানুষে তার মাতা-পিতার তুলনায় গড়ে ৬০০ টি নতুন পার্থক্য তৈরী হয় (মিউটেশন)।
মানুষের সঙ্গে শিম্পাঞ্জীদের এই পার্থক্য ১.১% এর মতো, মুছে যাওয়া ও নূতন ঢোকা জিনগুলি বিবেচনায় আনলে ৪ শতাংশ হয়।
জিনগত প্রকরণ ছাড়াও পরিবেশগত প্রতিক্রিয়া ও প্রভাবক আছে যা দুটি জীবে পার্থক্য তৈরী করে।
পরিবেশের প্রভাবে জেনেটিক কোডের ফলাফল প্রকাশে বা জিন এক্সপ্রেশনে পরিবর্তন হয়, কিন্তু জেনেটিক কোডে কোন পরিবর্তন আসেনা, অর্থাৎ পরিবেশের প্রভাবে যে অস্থায়ী পরিবর্তন তা পরবর্তী প্রজন্মে প্রবাহিত হবেনা।
পরিবেশগত পার্থক্য বেশিরভাগ গাছপালায় পাওয়া যায়। বাহ্যিক পরিবেশগত কারণ যেমন আলো, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, খনিজ এবং আরও অন্যান্য বিভিন্ন কারণেও পরিবেশগত পার্থক্য দেখা দেয়। পরজীবী সংক্রমণের মতো জৈবিক কারণগুলিও পরিবেশগত পরিবর্তনের কারণ হতে পারে।
মানুষের জিনগত প্রকরণ কিভাবে পরিমাপ করা হয়?
মানুষের জিনোমকে “পড়ার” জন্য দুটি সাধারণ উপায় হ’ল ডিএনএ সিকোয়েন্সিং এবং জিনোটাইপিং। উভয় পদ্ধতিতে কোন ব্যক্তির জেনেটিক কোড শরীরের যেকোন একটুকরো অংশ থেকে আলাদা করা হয় এবং আমরা ডিএনএর অক্ষরের ক্রমটি বইয়ের মতো পড়ার জন্য রাসায়নিক বিক্রিয়া ব্যবহার করি। কয়েক দশকের জেনেটিক গবেষণা থেকে আমরা সহজেই সনাক্ত করতে পারি যে জিনগত উপাদানগুলির কোন অংশে পার্থক্য রয়েছে ।
তথ্য বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য বিজ্ঞানের ওয়েবসাইট ও বই থেকে নিয়ে সবার বোঝার জন্য খুব সরল করে লেখা হয়েছে।