আজ আমরা জানবো সঙ্গীত পরিচালক শমীক গুহ রায়ের কথা। ছোটবেলা থেকেই মায়ের কাছে গানবাজনার হাতে খড়ি হয় তার। এরপর স্কুলে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় তিনি গান লিখতেন, সুর করতেন। এইভাবে ধীরে ধীরে যখন বড় হলেন সেখান থেকে শুরু করলেন বাংলা ব্যান্ড। বাংলা ব্যান্ডের তখন বেশ ভালো পজিশনে গিয়েছিলেন তিনি। ব্যান্ডের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায়, ব্যান্ড এ মাতরম এর মত অনুষ্ঠানে তিনি অংশগ্রহণ করতেন তার ব্যান্ডের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে। ব্যান্ডে থাকাকালীন তিনি ব্যান্ডের গানের সুর করতেন গাইতেন এবং অ্যারেঞ্জ করতেন। এইভাবে তার যাত্রা শুরু হয়।
এরপর ধীরে ধীরে পন্ডিত বিক্রম ঘোষ এর সঙ্গে তার দেখা হয় এবং তিনি পন্ডিত বিক্রম ঘোষ এর সঙ্গে প্রায় ১০ বছর সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করেন। এই ১০ বছর সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করার সুবাদে ইন্ডাস্ট্রিতে কি ধরনের কাজ হয় এ বিষয়ে অনেক কিছুই শেখেন।

ওই শিক্ষা এবং অভিজ্ঞতা থেকে তিনি ধীরে ধীরে নিজের কম্পোজিশন করা গান গাওয়া এবং সেগুলিকে রিলিজ করা শুরু করেন। শিক্ষার ক্ষেত্রে তিনি আরেকজনকে বিশেষ ধন্যবাদ জানাতে চান তিনি হলেন জনপ্রিয় ব্যান্ড ঈশানের পূর্বতন কিবোর্ড প্লেয়ার এবং বর্তমানে আমেরিকার ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এর অধ্যাপক শ্রী অভিষেক পাপান দত্ত। তিনি বলেন অভিষেক দত্তর কাছ থেকে তিনি অনেক কিছু বিশেষ করে টেকনিক্যাল জিনিসপত্রগুলো শিখতে পারেন এবং খুঁটিনাটি সমস্ত বিষয় শেখার ফলে তার মিউজিক ডিরেকশনের জার্নি পথ আরো প্রশস্ত হয়।
বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল গ্লোবালাইজেশনের প্রভাব সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন “টেকনোলজির পরিবর্তনের আগে ১৯৯৬ সালে যখন আমাদের কাছে গান শোনার কেবল মাত্র দুটি মাধ্যমে ছিল একটি রেডিও বা বেতার এবং অপরটি ক্যাসেট। সে ক্ষেত্রে আমাদের গান স্কিপ করার কোনো অপশন ছিল না কিন্তু ধীরে ধীরে প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে আমরা স্কিপ করার এই অপশনটি পেয়ে যাই। কারণ তখন আমাদের কাছে চলে এসেছিল সিডি এবং ডিভিডি।২০০৮ সালে তথ্য প্রযুক্তির বিপ্লব এর ফলস্বরূপ আমরা ইউটিউব পেলাম যার মধ্যে দিয়ে গোটা বিশ্বের সংগীতের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ গভীর হলো। বহু লক্ষ লক্ষ গান আমরা এখন ইউটিউব এর মাধ্যমে এবং অন্যান্য অডিও স্ট্রিমিং অ্যাপ এর মধ্যে দিয়ে শুনতে পায় ফলে মানুষের কাছে এখন অনেক বেশি অপশন এবং শোনার সময় খুব কম সব থেকে বড় কথা মানুষ ভালো গান শোনার পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে।

তিনি এও বলেন প্রযুক্তি বা টেকনোলজির দিক থেকে আমরা অনেকটা পিছিয়ে। ভারতের অন্যান্য প্রান্তের তুলনায় আমাদের প্রোডাকশন কোয়ালিটি কোনভাবেই তাদের সমতুল্য হচ্ছে না।
তিনি বলেন ইন্টারনেটের বাহ্যিক্যের মধ্যে ভালো কম্পোজিশন ভালো গান ঢাকা পড়ে যাচ্ছে। “ভাইরাল” বলে একটি শব্দ চলে এসেছে। কোন একটি গান যতক্ষণ না ইউটিউবে ১-২ মিলিয়ন ভিউজ হয় ততক্ষণ লোকজনের কাছে সেটা একটা খারাপ গান হিসেবেই বিবেচিত হয়। একটা গান হয়তো ভালো কিন্তু তা যেকোনো কারণেই মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পরতে পারেন তার ফলে সেই গানটির রিচ এবং ভিউ স্বাভাবিকভাবেই যথেষ্ট কম হয়।
ইন্ডিপেন্ডেন্ট আর্টিস্ট প্রসঙ্গে তিনি বলেন ইন্ডিপেন্ডেন্ট আর্টিস্টরা নিজেদের গান ঠিকমতো প্রচার করার সুযোগ পায় না অনেকেই ভালো কাজ করছেন কিন্তু মেইনস্ট্রিমে সেগুলো আসছে না তার অনেক রকম কারণ থাকে।
তিনি বলেন মিউজিকে এই গ্লোবালাইজেশনের ফলে ইন্ডিপেন্ডেন্ট আর্টিস্ট এখন মিউজিক স্ট্রিমিং অ্যাপ গুলিকে সরাসরি তাদের গানগুলিকে দিচ্ছে এবং গানের রয়্যালটি তারা পাচ্ছে।

তার ভবিষ্যৎ প্রজেক্ট সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন যে গায়ক দুর্নিবার সাহা সঙ্গে চারটি গানের কাজ করছেন, দুটি রবীন্দ্র সংগীত এবং দুটি লোকগীতি। গায়ক শোভন গাঙ্গুলি সঙ্গে পাঁচটি রবীন্দ্রসঙ্গীত এবং পাঁচটি লোকগীতি নিয়ে কাজ করছেন যার মধ্যে তিনটি ইতিমধ্যেই মুক্তি পেয়েছে। এছাড়াও নিজের কিছু ইন্ডিপেন্ডেন্ট অ্যালবামের কাজ করছেন। পুজোর সময়ও তার সুরে একটি গান আসতে চলেছে তবে গায়ক বা গায়িকার নাম এখনো ঠিক হয়নি। এছাড়াও তিনি নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের সঙ্গেও কাজ করছেন রবীন্দ্র সংগীত লোকগীতি সব ধরনের গান নিয়ে।
আন্তর্জাতিক পুরস্কার বিজয়ী এবং কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে মনোনীত ছবি ‘ক্যাফে ২০২২’ ছবিতে তিনি সংগীত পরিচালনা করেছেন। এই ছবিটি এখন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চিত্র উৎসবে দেখানো হচ্ছে। ছবিটি এখনো মুক্তি পায়নি।