শুধু তুই শুধু তুই
আর চাইছি না কিছুই
শুধু তুই শুধু তুই
আর চাইছি না কিছুই।
গানের লাইনগুলো মনে পড়ছে? হ্যাঁ ঠিকই ধরেছেন এই গানটি অঙ্কুশ-মিমি অভিনীত ‘ভিলেন’ ছবির গান। গানটি গেয়েছিলেন রাজ বর্মন এবং তৃষা চ্যাটার্জী।
আজ আমরা কণ্ঠশিল্পী তৃষা চ্যাটার্জীর কথা জানব। এই জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী তৃষা চ্যাটার্জী তিন বছর বয়স থেকে গান শেখা শুরু করেন তার মায়ের কাছে। তার মা হারমোনিয়াম বাজিয়ে গান গাইতেন এবং তৃষা মন দিয়ে শুনবেন এবং তিনিও গান গাইতেন মায়ের সাথে। তৃষা কে প্রথমে তার মা-বাবা একটি ডান্স স্কুলে ভর্তি করেন কিন্তু তার আগ্রহ বরাবরই ছিল গানের প্রতি। বাড়িতে নাচ প্র্যাকটিস করার তিনি নাচ প্র্যাকটিস না করে গান গাইতেন। তার মা সেটা বুঝতে পারেন এবং সেখানকার স্থানীয় সংগীতশিল্পী শ্রীবাসুদেব মন্ডল এর কাছে তাকে শাস্ত্রীয় সংগীত শেখানোর ব্যবস্থা করেন তিনি। পাঁচ বছর বয়স থেকে প্রায় ১৫ বছর বয়স পর্যন্ত তৃষা শ্রী বাসুদেব মন্ডলের কাছে গান শেখেন। এরপর তার পরিবার কলকাতায় শিফট করে। এরপর তৃষা প্রায় দু’বছর শ্রীমতি স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্ত এর কাছে গান শেখেন।

রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভোকাল মিউজিক বাংলা গান (স্নাতক) বিষয়ে পড়াশোনা করেন এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রিও লাভ করেন বাংলা গান নিয়ে। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভোকাল মিউজিক(বাংলা গান) বিভাগের অধ্যাপিকা অনিন্দিতা মুখার্জীর কাছে তিনি খেয়াল সংগীত শেখা শুরু করেন।অধ্যাপিকা অনিন্দিতা মুখার্জীর কাছে তিনি প্রায় নয় বছর খেয়াল সংগীত শেখেন।
তৃষা শুধু গান নয় হারমোনিয়াম এবং তানপুরা বাজানো শিখেছেন এবং বর্তমানে গিটার বাজানো শিখছেন কলকাতার জনপ্রিয় গিটারিস্ট শুভ্র’র কাছে।

২০১৭ সালে রাজনারায়ণ দেবের সঙ্গীত পরিচালনায় ‘বারান্দা’ ছবিতে একটু খোলা হাওয়া গানটি গেয়ে তিনি টলিউডে কণ্ঠশিল্পী বা গায়িকা হিসেবে ডেবিউ করেন। এই গানটি লিখেছিলেন জনপ্রিয় গায়ক এবং সুরকার শ্রী নচিকেতা চক্রবর্তী। এই ছবিটিতে অভিনয় করেছেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত এবং ব্রাত্য বসু।
২০১৮ সালে তিনি অম্লান চক্রবর্তীর সুরে ‘ভিলেন’ ছবিতে ডুয়েট গান ‘শুধু তুই’ রাজ বর্মন এর সাথে গান। এই গানটি থাকে খুবই জনপ্রিয়তা দিয়েছিল এবং মানুষের মনে তিনি তার জায়গা করে নেন। এই ছবিটিতে অঙ্কুশ হাজরা, মিমি চক্রবর্তী প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন। ২০১৯ সালে অম্লান চক্রবর্তীর সুরে ‘কে তুমি নন্দিনী’ ছবিটির ‘ও মন’, ‘পোড়ামন’ এবং ‘কন্যারে’ গান গুলি তিনি গান। এই ছবিটিতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন বনি সেনগুপ্ত এবং রূপসা মুখার্জী। ২০১৯ সালে পরিচালক অনীক দত্তের ছবি ‘ভবিষ্যতের ভূত’এ ‘রুপালি’স সং’গানটি দেবজ্যোতি মিশ্রের সুরে তিনি গেয়েছিলেন। ২০২০ শান্ত জিৎ চ্যাটার্জীর সুরে ‘কড়াপাক’ ছবিটি থেকে ‘স্ট্রবেরি রাত’ গানটি তিনি গান। এই গানটিতে অভিনেত্রী পায়েল সরকার পারফর্ম করেন।

২০১৮ সালে হইচই ওটিটির জনপ্রিয় ওয়েব সিরিজ ‘দুপুর ঠাকুরপো 2’ তে তার গাওয়া ‘টুকি’, ‘বৌদি সুপারহিট’, ‘হোলি সং’ গানগুলি খুবই জনপ্রিয় হয়।
কিছুদিন আগে জি মিউজিক বাংলা লেভেলের তরফ থেকে ‘ওরে পিয়া’ ডুয়েট গানটি তিনি রাজ বর্মন এর সঙ্গে গান। এই গানটিও দর্শক-শ্রোতারা পছন্দ করেন।
বাংলাদেশে ‘লাল লিপস্টিক’ নামক গানটি তিনি গেয়েছেন। এই গানটিতে অভিনয় করেছেন বাংলাদেশের সুপারস্টার শাকিব খান এবং বিদ্যা সিনহা মিম। এছাড়াও ‘তোমাকে আপন করে’ ‘হৃদয় আয়না’ছাড়াও অসংখ্য রোমান্টিক এবং আইটেম আইটেম সং তিনি গেয়েছেন।
২০১৯ এ ‘চেস’ ছবিটির মধ্যে নিয়ে তিনি বলিউডের ডেবিউ করেন গায়িকা হিসেবে। এই গানটির সংগীত পরিচালনা করেছেন রোহান বি পাঠক।
তার আগামী প্রজেক্ট সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান বিক্রম ঘোষের সঙ্গে আপকামিং অ্যালবামে তিনি গান গাইছেন। এছাড়াও সংগীতপরিচালক স্যাভির পরিচালনায় বাংলাদেশের একটি ছবিতে তিনি গান গেয়েছেন যেটি এখনো মুক্তি পায়নি।এছাড়াও দুই থেকে তিনটি সিনেমায় তিনি গান গেয়েছেন যেগুলি অতিমারির কারণে হওয়া লকডাউনের এর জন্য এখনো মুক্তি পায়নি।
তিনি এখন এই লকডাউন এর সময় তার ইউটিউব চ্যানেলে খুবই সক্রিয় আছেন। তার দর্শক-শ্রোতাদের কথা চিন্তা করে তিনি বেশকিছু নতুন গান এবং বলিউডি কভার সং গেয়েছেন বা গাইবেন। কিছুদিন আগেই তৃষার গাওয়া ‘আমি তোমারও সঙ্গে’ রবীন্দ্র সংগীত তার ইউটিউব চ্যানেলে মুক্তি পায়। এই গানগুলির দর্শকেরা যথেষ্ট প্রশংসা করেন। এই রবীন্দ্র সংগীত গুলি রিঅ্যারেঞ্জ করেছেন বব এ সেন। তিনি ভবিষ্যতেও এই ধরনের গান ইউটিউব চ্যানেল থেকে আরও বেশি আপলোড করবেন বলে জানান।

তিনি জানান একজন গায়িকাকে সবসময়ই ভার্সেটাইল হওয়া প্রয়োজন। ভার্সেটাইল না হয়ে কেউ যদি টাইপকাস্ট হয়ে যান, তাহলে ভবিষ্যতে কাজ পেতে তাকে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়। এখন যেকোনো পরিস্থিতি অনুযায়ী যেহেতু প্লেব্যাক করতে হয় তাই বিভিন্ন ধরনের গান গাওয়ার মতন মানসিকতা থাকা দরকার।
তিনি বলেন সঙ্গীত শিল্পীদের সঙ্গীত চর্চা বা গানের রেওয়াজ করা খুবই প্রয়োজন। রেওয়াজ করা ছাড়া গানের ক্যারিয়ার দীর্ঘদিন বজায় রাখা কখনোই সম্ভব নয়। রেওয়াজ মানুষের কন্ঠকে আরো বেশী মসৃণ, কোমল, শ্রুতিমধুর এবং পারফেক্ট করে তোলে। রেওয়াজ বা গান গাওয়া তার প্রত্যেক দিনের অভ্যাস এবং প্রত্যেকদিন নিয়ম করে এই অভ্যাস বজায় রাখেন।