কথায় বলে সব কিছু ভাগ করা যায়, কিন্তু ফ্ল্যাটমেট ! তা বেশ কঠিন বৈকি। তবে তৃষা কিন্তু খুঁজে বার করেছে তার একটা ফ্ল্যাটমেট কিন্তু আদেও কী কী সে থেকে যাবে ? নাকি কাহিনীতে আসবে নতুন টুইস্ট ? হ্যাঁ, একদম ঠিক একটি নতুন কাহিনী, নতুন গল্প নিয়েই সিরিজ আকারে হাজির হচ্ছে আড্ডা টাইমস। আগামী কাল ৩০শে জুলাই মুক্তি পেতে চলেছে আড্ডা টাইমস এর নতুন ওয়েব সিরিজ ফ্ল্যাটমেট। এই সিরিজের গল্প কেবল বাস্তবিক না, খুবই রিলেটেবল বলতেই হয়. আর এমনটা আমরা না, বলেছেন খোদ গল্পের তৃষা অর্থাৎ সিরিজের অভিনেত্রী ঐশ্বর্য সেন। সিরিজ মুক্তির আগে তাঁর সাথে গল্প করার জন্যে আমরা লাগাই ফোন আর সেখানেই হয় আড্ডা, যেখানে অভিনেত্রী জানান ফ্ল্যাটমেটের বেশ কিছু অজানা গল্প।
সিরিজ মুক্তি পেতে যেহেতু মাত্র একটা দিন বাকি তাই ঐশ্বর্যের উত্তেজনা কত তা জানতে চাইলে তিনি আমাদের জানান, তিনি প্রচন্ড এক্সসাইটেড। তাঁর কথায়, ‘যেহেতু আমরা এখনও পুরো সিরিজটা দেখিনি তাই উত্তেজনা বোধ হয় একটু বেশি রয়েছে। ডাবিং এর সময় যতটা দেখেছিলাম ঠিক ততটাই। তবে এবারে রিলিজ হলে আরাম করে বাড়িতে বসে দেখবো। তবে এটা বলতে পারি এই সিরিজে একটা অন্য ধরনের ফ্লেভার পাবেন দর্শকরা। এখানে সিরিজটি খুবই প্রাকটিক্যাল। এবং বিশেষ করে এই জেনারেশন এর কাছে এটি খুবই রিলেটেবল হতে চলেছে। এখানে আমার চরিত্রের নাম তৃষা। আর এখানে তৃষার ২টি স্ট্রাগলিং লাইফই দেখানো হয়েছে। তাঁর প্রফেশানাল ও পার্সোনাল দুটি লাইফকেই এখানে সমান ভাবে দেখানো হয়েছে।”
সিনেমার বিষয়বস্তু নিয়ে বিস্তারিতভাবে জানতে চাইলে ঐশ্বর্য আমাদেরকে জানান, “এটি মূলত একটি রম-কম সিনেমা অর্থাৎ রোম্যান্টিক ও কমেডির সংমিশ্রণ মিলিয়ে। তবে আবেগও কিন্তু ভরপূর্ণ রয়েছে। গল্পে তৃষা জলপাইগুড়ি থেকে কলকাতায় আসে নিজের পা এ দাঁড়াবে বলে। সে প্রায় ৫ বছর ধরে কলকাতাতে রয়েছে এবং তার সাথেই একটা লিভ-ইন সম্পর্কে রয়েছে। তৃষা পেশায় একজন wedding planner এবং তার সাথেই একজন ডান্স কোরিওগ্রাফার। এটি তার প্রফেশনাল স্ট্রাগল। তবে এরই মাঝে রয়েছে তার পার্সোনাল স্ট্রাগল। তবে কোলকাতাতে যার সাথে এত বছর ধরে লিভ-ইন সম্পর্কে তৃষা ছিল তার সাথে ব্রেক হয় তার আর এবারে পালা নতুন ফ্ল্যাটমেটকে খোঁজা। আর সেজন্যেই শুরু হয় ফ্ল্যাটমেট খোঁজার ইন্টারভিউ। আর সেখানেই তৃষার আলাপ হয় একটি ছেলের সাথে এবং তাকে ভালো লাগে তারপর শুরু হয় একসাথে ফ্ল্যাটমেট হিসাবে থাকার যাত্রা। যেখানে তাদের দুজনের পেশা সম্পূর্ণ আলাদা হলেও ওই ফ্ল্যাটে তারা তৈরী করে নিয়েছিল নিজেদের একটি আলাদা জগৎ। তৃষার ফ্ল্যাটমেট এর নাম রাম্যদীপ আর সে পেশায় একজন স্ট্যান্ড-আপ কমেডিয়ান। যা এখনও সব জায়গায় সেইভাবে গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠেনি পেশা হিসাবে, সেক্ষেত্রে তারও একটা আলাদা স্ট্রাগল আছে। আর এই নিয়েই পুরো গল্পটা। তবে এর পর কী হয় সেটা জানতে কিন্তু দর্শকদেরকে অবশ্যই দেখতে হবে আড্ডাটাইমস এ “ফ্ল্যাটমেট”। তবে এই গল্পে ক্লাইমেক্সে কী হতে পারে সেই নিয়ে ঐশর্যকে জিজ্ঞাসা করা হলে সে শুধু এটুকুই বলে যে ট্রেলার এ দেখানো হয়েছে তৃষা, রাম্যকে নতুন ফ্ল্যাটমেট খুঁজে দিতে বলেছে তা কিন্তু এমনি এমনি দেখা হয়নি, সেখানে নিশ্চই কিছু গল্প লুকিয়ে রয়েছে। বাকিটা দেখার জন্যে অবশ্যই দেখতে হবে সিরিজটি।
বাস্তব জীবনে তৃষা এবং ঐশ্বর্য কতটা আলাদা তা জানতে কার না ইচ্ছা হয়, তা জানতে চাওয়ায় ঐশ্বর্য আমাদের জানান, “তৃষা এবং ঐশর্যের মধ্যে বেশিরভাগটাই অমিল রয়েছে। কিছুটা মিল থাকলেও এই দুই মানুষের মধ্যে অমিল টাই বেশি। তৃষা মেয়েটা অনেকটাই আলাদা, অনেকটা ম্যাচিউর, তার জীবনের স্ট্রাগল তা অনেক বেশি এবং কঠিন ও। সেক্ষেত্রে ঐশ্বর্য যেন সেটা ভাবতে পারে না। তার কিন্তু নিজের পরিবারের সাপোর্ট সবসময় লাগবে। গল্পে তৃষা একজন ডান্স কোরিওগ্রাফার কিন্তু বাস্তব জীবনে আমি নাচ করতে পারি না, গান পারি। তাই এখানে আমাকে আলাদা করে নাচ শিখতে হয়েছে এবং এটি আমার কাছে বেশ চ্যালেঞ্জিং ও বটে। তৃষা নিজেকে নিয়ে খুব গর্ব বোধ করে, সে খুব কনফিডেন্ট একটা মেয়ে। তবে এটা বলবো, তৃষা চরিত্রটিতে অভিনয় করতে গিয়ে আমি খুব মজা করেছি। আসলে নিজের বিপরীত একটা মানুষের চরিত্র অভিনয় করতে গেলে সেটা বেশ ইন্টারেস্টিং হয়। এছাড়া আমার ডিরেক্টার ও বলেছেন আমি নাকি ক্যামেরা ও করলে তৃষা একটা সম্পূর্ণ আলাদা মেয়ে আবার ক্যামেরা অফ করলে কিন্তু আবার ঐশর্য নিজের মতো হয়ে যায়। ”
আড্ডা টাইমস এর সাথে দ্বিতীয়বার কাজ এবং এই টিমের সাথে কাজ করতে গিয়ে কেমন অভিজ্ঞতা জিজ্ঞেস করলে ঐশ্বর্য জানায়, ” আমি খুবই লাকি এই ক্ষেত্রে, দুই বারেই আমি খুব ভালো টিম পেয়েছি। আমাদের এতো টাইট সিডিউল এর মাঝেও কোনো চাপ অনুভব করতে পারিনি খুব মজা করে করেছি। সবাই এক সাথে খুব আনন্দ করেই কাজটা করেছি তাই হয়তো একটুও চাপ অনুভব করতে পারিনি। এবং এবং আমার সহ অভিনেতা শ্রমণ দা’র কথা কী বলবো, উনি যে এতো ভালো মানুষ এবং এতো ভালো দক্ষ অভিনেতা জানতাম ই না। ওনার সম্মন্ধে অনেক শুনেছিলাম, কিন্তু ওনার কোনো কাজ আমি আগে দেখিনি কিন্তু ওনার সাথে কাজ করে বুঝলাম কেন ওনাকে সবাই এতো ভালো অভিনেতা বলে। এছাড়া একসাথে কাজ করতে গিয়ে আমরা একে অপরকে ভালো করে চিনি এবং ওনার থেকে অনেক কিছু শিখতেও পারি। সবমিলিয়ে একটি দারুন অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার এই টিমের সাথে।”
এর সাথেই ঐশ্বর্য আমাদের সাথে ভাগ করে নেয় শ্যুটিং ফ্লোরে চলা কিছু স্মরণীয় মজার ঘটনা। ঐশর্য জানায়, “একদিন নাকি সবাই মিলে তাকে প্রাঙ্ক করার কথা ভাবে, আর সেই মতো তারা সকাল থেকেই সেইমতো প্রস্তুতি নিয়েছিল কিন্তু কোনোভাবে আমি সেটা বুঝে যাই এবং ওদেরকে বলি যে দেখো তোমরা আমার সাথে প্রাঙ্ক করতে পারবে না তাই বেকার চেষ্টা করো না। শেষমেশ তারা হার মেনে নেয়. কিন্তু তাই বলে কী প্রাঙ্ক করা হবে না। এরপর আমরা সবাই মিলে প্রাঙ্ক করার জন্যে যাই আমাদের কস্টিউম ডিপার্টমেন্টের দীপেন্দু দা এর কাছে। শেষে বিষয়টা এইতো গুরুতর হয়ে যায় যে দীপেন্দু কেঁদে ফেলার অবস্থায় পৌঁছে যায় এবং আড্ডা টাইমস এর হেড কে ফোন করতে যায় তারপর আমরা সবাই মিলে তাকে জানি যে আমরা প্রাঙ্ক করছিলাম তার সাথে। তো সেটা আমার কাছে খুব স্মরণীয় হয়ে থাকবে।”
ঐশ্বর্যকে আমরা যখন জিজ্ঞাসা করি যে তাকে যদি তৃষার মতো পরিবারের থেকে আলাদা থেকে একটা ফ্ল্যাটমেটের সাথে থাকতে হয় তাহলে সে কী করবে এবং কেমন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হবে, তখন সে জানায়, “আমার একটা খুব প্লাস পয়েন্ট হলো আমি খুব সহজেই এডপ্ট করে নিতে পারি এবং ভালোভাবে এডজাস্ট করেও নিতে পারি। তবে ফ্ল্যাটমেটকেও তেমনটাই হতে হবে নাহলে সমস্যা হয়ে যাবে। আমরা তো কেউ জানি না আমরা কখন কোনো পরিস্থিতির সম্মুখীন হই তাই আমি সবকিছুর জন্যে প্রস্তুত। আসলে পারি না বলা কিছু হয় না, পরিস্থিতি সামনে পর্যায়ে নিয়ে গেলে অবশ্যই পড়তে হবে। ”
ফ্ল্যাটমেটের পর ঐশ্বর্যের আগামী প্রজেক্ট কি তা নিয়ে উঁকি দিলে ঐশ্বর্য জানায় যে সামনে তার একটা সিরিজ আছে রূপ প্রোডাকশনের সাথে। পরিচালক সৌম্যজিৎ এর পরিচালনায় ‘সন্ধ্যে নামার পরে’। এছাড়া রয়েছে সিনেমা ইয়ার্ড। সেখানে তাঁর সাথে রয়েছেন রজতাভ দত্ত, শান্তিলাল মুখার্জীর মতো অভিনেতা। তবে তার আগেই কিন্তু এখন সামনে রয়েছে আড্ডা টাইমস এর “ফ্ল্যাটমেট”। আগামীকালই তা মুক্তি পেয়ে যাচ্ছে। তাই গল্পের ক্লাইমেক্স জানতে অবশ্যই দেখুন “ফ্ল্যাটমেট”।