বাংলা অভিনয়ের জগতে দেবলীনা দত্তের নাম খুবই পরিচিত। নিজের অভিনয় দিয়ে তিনি বারবার দর্শকের মন জয় করে নিয়েছেন, সে মাধ্যম টিভির পর্দা হোক বা রুপোলি পর্দা হোক কিংবা বর্তমান দিনের ওটিটি প্ল্যার্টফর্মে। সম্প্রতি টিজার মুক্তি পেয়েছে তপন সাহার কালিম্পঙ ক্রাইমস। যা খুব শীঘ্রহি আগামী আগস্ট মাসে ক্লিক চ্যানেলে মুক্তি পেয়ে যেতে চলেছে। সেখানে সায়নী নামের একজন গোয়েন্দার চরিত্রে দেখা যাচ্ছে দেবলীনা দত্তকে। আর সেই নিয়েই আড্ডা দিতে আমরা পৌঁছে যাই তাঁর কাছে টেলিফোন মাধ্যমে সরাসরি। যে কোনো সিনেমা বা ওয়েব সিরিজ এর টিজার বের হলেই হুলুস্থূল শুরু হয়ে যায়। কালিম্পঙ ক্রাইমস এর টিজার বের হওয়ার পর থেকে সোশ্যাল মিডিয়াতে এখনও পর্যন্ত কেমন ফিডব্যাক পাচ্ছেন দেবলীনা তা জিজ্ঞাসা করতে তিনি আমাদের জানান, সাধারণত তিনি সোশ্যাল মিডিয়াতে কোনো সিনেমা বা সিরিজের কিছু পোস্ট করেন তখনই বেশ একটা ক্যুরিসিটি মানুষের মধ্যে তৈরী হয়. আর এবারে তো এই টিজারে কোনো কিছুই রিভিল করা হয়নি, গল্প কেমন হবে তার কোনোরকম ভাবেই আন্দাজ করা যাচ্ছে না স্বভাবতই এবারে যেন মানুষের ক্যুরিসিটি একটু বেশি। মানুষের দেখার ইন্টারেস্ট টাও তাই এবারে খানিক মাত্রায় বেশি। এই সিরিজের গল্পের বিষয় বস্তু নিয়ে খানিক বিস্ত্রে জিজ্ঞাসা করা হলে দেবলীনা দি জানান, এখনই কিছু তিনি বলতে পারবেন না তবে যেটা বলতে পারবেন তা হল এটি একটি মার্ডার মিস্ট্রী এখানে গল্পটাকে একটু অন্যরকমভাবে ট্রিট করা হয়েছে। এছাড়া আমরা চিরাচরিত ভাবে বাংলাতে খুব কমই মহিলা গোয়েন্দা চরিত্রকে দেখতে পেয়েছি, যে পেয়েছি তা বেশিরভাগ পুরুষ গোয়েন্দা চরিত্র। সেক্ষেত্রে এখানে এই বিষয়টিও একটি পয়েন্ট অফ এট্রাকশন।
যে কোনো সিনেমা বা সিরিজ করতে গিয়ে সকলেই কোনো না কোনো বিশেষ ঘটনার বা বিশেষ কোনো অভিজ্ঞতার স্মৃতি মনে নিয়ে বাড়ি ফেরেন। এমন কিছু তাঁর সাথেও হয়েছে কী না জানতে চাওয়ায় দেবলীনা দি আমাদেরকে জানায় ‘Pixy’ এর কথা। কালিম্পঙ ক্রাইমস এর শ্যুট চলাকালীন তাঁরা যে হোটেলে থাকতেন সেখানেরই পোষ্য চারপেয় এই Pixy. দেবলীনা দি জানায় যে, তার প্রতিদিন শ্যুটিং এর কল টাইম থাকতো ৫-৬ টা নাগাদ। আর সেই সময়ই Pixy প্রতিদিন দরজায় এসে ডাক দিত, তখন দরজা খুলে দেওয়া হতো তার জন্য এবং যতক্ষণ না দেবলীনা দি রুম ছেড়ে যেতেন ততক্ষন সেখানে বসে থাকতো, সবার সাথে খুব খেলতো। সেখানে তার কোনো খেলার সাথী ছিল না তাই ওই ১১ দিনের জন্যে সে যেন খেলার সাথী রূপে পেয়ে গেছিল দেবলীনা দি ও তাঁর হেয়ার ড্রেসারকে। ওই কিছু দিনেই Pixy তাঁর খুব কাছের হয়ে গেছিল। কিন্তু শেষের দিন আর ওর সাথে দেখে করে যেতে পারেননি বরং বলা যায় দেখা করতে চাননি কারন তিনি জানতেন তাহলে তিনি হয়ত আরো বেশি আবেগপ্রবন হয়ে পড়বেন এবং Pixy অভ্যাসমত আবারও হয়ত পরেরদিন সকালবেলা দরজার কাছে এসে ডাকবে। দেবলীনা দি বলেন যে, তিনি জানেন না Pixy এখনও রোজ সকালে দরজার কাছে আসে কী না তবে ও সারাজীবন তাঁর মনে থাকবে, কখনও ভুলবেন না।
এছাড়াও দেবলীনা দির পাইপ লাইনে রয়েছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সিনেমা, তা হল পরিচালক অতিউল ইসলামের “কিশালয়”। এই বিষয়ে দেবলীনা দি জানান, এই সিনেমাটি আমার কাছে ভালো খারাপ এর ঊর্ধে গিয়ে একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ চলচ্চিত্র। যা বর্তমান এই প্যান্ডেমিক এ মানুষের মানসিক পরিস্থিতিকে তুলে ধরেছে, বিশেষ করে। কারন শিশুদের মনের উপর এই প্যান্ডেমিক বেশি করে প্রভাব ফেলেছে। বর্তমানে এই সিনেমাটি এখন পোস্ট প্রোডাকশনে রয়েছে। এবং আশা করা যাচ্ছে হয়ত এই বছরে শিশু দিবস এর সময় এই ছবি মুক্তি পেতে পারে। তবে বর্তমান পরিস্থিতির উপর খানিকটা নির্ভর করছে যে কবে মুক্তি পাবে। এই সিনেমাতে দেবলীনা দত্তকে আমরা একজন উকিলের চরিত্রে দেখতে পাবো যে এই বর্তমান সিস্টেমের বিরুদ্ধে গিয়ে আওয়াজ তুলবে। এই সিনেমা কেবল একটা সিনেমা না একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা মানুষের মানসিক পরিস্থিতিকে অনেকটা ফুটিয়ে তোলে।
টেলিভিশন জগতে বেশ অনেক গুলি বছর দর্শকের মনের মধ্যে বিরাজ করেছেন দেবলীনা দত্ত। আর আবারও অনেকগুলি বছর পরে কালার্স বাংলার সাথে ত্রিশূল এর সাথে কামব্যাক করছেন তিনি। মাঝে কিছু ধারাবাহিকে ছোট ছোট চরিত্রে কিছু দিনের জন্যে তাঁকে দেখা গেলেও সেভাবে তাকে পাওয়া যায়নি। আর এবার তিনি আসছেন একদম একটি অন্য চরিত্রে। ত্রিশূল এ তিনি নেগেটিভ চরিত্রের ভূমিকাতে তাঁকে দেখা যাবে। তাঁর চরিত্রের নাম রাজ নন্দিনী যিনি একজন খুব নাম করা ফ্যাশন ডিজাইনার। আর খানে তিনি কেবল যে নেগেটিভ চরিত্র করছেন তা কিন্তু নয় তিনিই হলেন এখানে প্রধান খলনায়িকা। দেবলীনা দি জানান এর আগেও তিনি গ্রে শেড এর চরিত্র করেছেন কিন্তু এই প্রথম এন্টাগোনিস্ট এর চরিত্র করতেই চলেছেন। এবং এই ধারাবাহিকের মধ্যে একটি খুবই স্টিরিওটিপিক্যাল ধারণাকে ভাঙা হচ্ছে যা দর্শককে কাছে টানবেই বলে মনে করা হচ্ছে। আর সে জন্যে তিনি কালার্স বাংলা চ্যানেল এবং পরিচালক স্নেহাশীষ দা কে সাধুবাদ জানিয়েছেন। এছাড়াও তিনি জানিয়েছেন যে এই ধারাবাহিক এবং এই এই রাজ নন্দিনীর চরিত্র হতে চলেছে একেবারেই নিয়ম বিরুদ্ধ।
অর্থাৎ সব মিলিয়ে বলা যেতেই পারে, এই বছর বারবার সকল বিনোদন মাধ্যমেই দেবলীনা দত্ত হাজির হবেন দর্শকদের মনকে আবার জয় করে নিতে। এবং তাঁর সাথেই বাংলার দর্শকরা পেতে চলেছেন কিছু বিশেষ সিনেমা, ওয়েব সিরিজ এবং আরও একটি ধারাবাহিক যা খুব শীঘ্রহি আসতে চলেছে।