কমেডি এবং আবেগের সংমিশ্রণ খুবই কম দেখা যায় আজকাল বলিউডে। এবং তা যতটা সুন্দর সেটাকে যথার্থ ভাবে ফুটিয়ে তোলা বা তাকে সঠিকভাবে দর্শকের কাছে তুলে ধরা ঠিক ততটাই কঠিন। তবে সেই বিষয়টিকেই সাধ্য করে তুলেছেন পরিচালক Laxman Utekar তাঁর নতুন সিনেমা “মিমি”-র মধ্যে দিয়ে। এই সিনেমার মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল ৩০শে জুলাই কিন্তু এই সিনেমার অভিনেত্রী কৃতি শ্যানন এর জন্মদিন উপলক্ষ্যে উপহার হিসাবে গত ২৭ তারিখেই সিনেমাটিকে মুক্তি দেওয়া হয়। বর্তমানে সিনেমাটি দেখা যাচ্ছে নেটফ্লিক্স ইন্ডিয়া ও জিও সিনেমাতে। মিমি সিনেমাটি একটি মহারাষ্ট্রীয় সিনেমা “Mala Aai Vhhachy” থেকে নেওয়া। তবে রিমেক মানে এই নয় যে এতে কোনো নতুনত্ব নেই, বরং বলা যায় সিনেমাতে অনেক কিছুর ধরন পাল্টানো হয়েছে, সে বার্তা পরিচালক দর্শককে দিতে চেয়েছেন তা আরও বেশি স্পষ্ট করে তুলে ধরা হয়েছে। এবং সর্বোপরি সিনেমার প্রত্যেকটি চরিত্র নিজেদের ছাপ রেখে দিয়েছে। এখনও পর্যন্ত বহু দর্শকের ফিডব্যাক অনুযায়ী এটি এই বছরের অনিয়ম খুব ভালো একটি সিনেমা, একটি পারিবারিক সিনেমা।
সিনেমার গল্প এখানে এক রাজস্থানের মেয়ের, যে সেখানে ডান্স এর নানান অনুষ্ঠান করে থাকে এবং তাঁর স্বপ্ন বলিউডে গিয়ে অভিনেত্রী হবে এবং তাঁর স্বপ্নের রাজকুমার বাজিরাও এর মাস্তানি আর রাম এর লীলা হবে। কিন্তু সেজন্য তাঁর প্রয়োজন অনেক টাকা আর সেখান থেকেই শুরু হয় গল্পের শুরু। গল্পে দেখানো হয় এক আমেরিকান জুটি একটি Surrogate মা চাইছে তাদের বাচ্চার জন্যে। আর সেই সময়েই মিমির সন্ধান দেয় ড্রাইভার ভানু। মিমি টাকার কারনে সেই প্রস্তাবে রাজি হয় কিন্তু মাঝ পথে কোনো এক কারনে সেই আমেরিকান জুটি জানায় তারা সেই বাচ্চা আর চায় না আর সেখান থেকেই শুরু মিমির একজন মা হওয়ার যাত্রা। সে নিজের সাথে, নিজের স্বপ্নের সাথে, পরিবারের সাথে, গোটা সমাজের সাথে লড়াই করে। শেষমেশ মিমিকে দেখা যায় একজন মা এর রূপে, যে নিজের ছেলের জন্যে নিজের সবকিছুকে ত্যাগ করে তাকেই নিজের জীবনের হিরো বানিয়েছে। এর এইভাবেই গল্প এগোয় তার ক্লাইম্যাক্স এর দিকে।
এবার যদি আসা যায় প্রত্যেকটি চরিত্র এবং অভিনেতা-অভিনেত্রীদেরকে নিয়ে তাহলে বলতেই হয় এখানে যেন লেখক এদের কথাই মাথায় রেখে চরিত্র গুলি লিখেছেন। প্রথমেই আসা যাক Pankaj Tripathi-র কাছে, তিনি এই সিনেমাতে ভানু চরিত্রে অভিনয় করছেন এবং পেশায় তিনি গাড়ি চালান। সিনেমাতে তাকে একবারও দেখে মনে হয়নি তিনি যেন কোনো সংলাপ বলছেন, কারন প্রত্যেকটি লাইন খুব জীবন্ত লাগছিল। জেক বলা হয় এফোর্টলেস। তাঁর কমিক টাইমিং ও দুর্দান্ত। বেশিরভাগ সময় তাঁকে না হয় কমেডি চরিত্রে নাহলে কোনো বিপজজনক চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গেছে তবে বলতেই হবে মিমি তে ভানুর চোখের জলও দর্শককে আবেগপ্রবন করবেই। সিনেমাতে মিমির বন্ধুর চরিত্রে অভিনয় করেছেন Sai Tamhankar, তাঁর চরিত্রের নাম সামা। বলা বাহুল্য তিনি যখনই স্ক্রিন শেয়ার করেছেন ততবারই নিজের অভিনয় দক্ষতার ছাপ রেখেছেন। কী অনবদ্য অভিনয়। সিনেমায় মিমির বাবা ও মা এর চরিত্রে অভিনয় করেছেন Manoj Pahwa এবং Supriya Pathak. এতদিনের তাঁদের অভিজ্ঞতা যেন বারবার স্ক্রিনে ফুটে উঠেছে। তাদের স্ক্রিন টাইমিং খুব বেশি না হলেও যতটা সময়েই তারা ছিলেন নিজেদের সর্বস্ব দিয়েছেন। এছাড়া আমেরিকান জুটির চরিত্রে অভিনয় করেছেন Evelyn Edwards এবং Aidn Whytock. নিজেদের চরিত্রকে খুব সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন এই জুটি। এবং যে ছোট্ট রাজকে আমরা পেয়েছি অর্থাৎ Jacob Smith সেও কিন্তু খুব সুন্দরভাবে নিজের ভূমিকা পালন করে গেছে। এবং সবশেষ সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ মিমি, অর্থাৎ Kriti Sanon. তিনি তো মিমির জীবনটাকে বেঁচেছেন। তাকে খুব সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছে। তাঁর চরিত্রের মোট তিনটি শেড আমরা এখানেই দেখতে পেয়েছি, একজন খুব চঞ্চল, একজন মা, আর একজন খুব ম্যাচিউরড মানুষ যে প্রতি মুহূর্তে সমাজের সাথে লড়াই করেছে। কৃতির অভিনয় দর্শকের মন কাড়ার মতো। সিনেমাতে মিমি যেমন একটা মেয়ে থেকে মা হয়ে উঠেছেন, সমাজের প্রত্যেকটি দিককে দেখেছে, নানান বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে ঠিক তেমনভাবেই দর্শকও সেই যাত্রার সঙ্গী হয়েছেন। সব মিলিয়ে প্রত্যেকটি চরিত্রই নিজেদের ছাপ রেখে গেছে।
এই সিনেমাতে অনেকগুলি সোশ্যাল ইস্যুস তুলে ধরা হয়েছে, বর্ণ-বিদ্বেষকে দেখানো হয়েছে। খুব সেনসিটিভ বিষয় গুলিকে দেখানো হয়েছে কিন্তু কারোর মনের ভাবাবেগকে কোনোরকম আঘাত না দিয়ে। এখানে লেখক মাত দিয়েছেন বলতেই হয়। সারোগেসি এখন বেশ প্রচলিত একটি শব্দ আমাদের কাছে কিন্তু সেই বিষয়ে সঠিক জ্ঞান অনেকের নেই বা তাঁর ফলে তার সাথে জড়িত ঘটনা গুলি কী কী হতে পারে তার ধারণা আমাদের অনেকের কাছেই খুব কম। এছাড়া এখন খুব সাদা বাচ্চা হওয়াতে মানুষের দেখতে আসার যে ঢল সেটাকেও দেখানো হয়েছে। অনেকেই সারোগেসির মাঝপথে চলে চলে যায়, তখন সেই সারোগেট মা এর সামাজিক পরিস্থিতি কী তৈরী হয় সেই সকল সেনসিটিভ বিষয়কে এই সিনেমায় তুলে ধরেছেন পরিচালকLaxman Utekar. এছাড়া সিনেমার এডিটিং, সিনেমাটোগ্রাফি, কোরিওগ্রাফি সব কিছুই বেশ দেখার মতো। এবং সিনেমায় A R Rehman এর মিউজিক এবং Shreya Ghosal এর গলা সব কিছু যেন একসাথে মাতিয়ে তুলেছে। সব মিলিয়ে বলা যেতেই পারে একটি ভালোবাসার সিনেমা “মিমি”। তবে শেষমেশ গল্পের মোড় কোনদিকে ঘুরলো তা জানতে অবশ্যই দেখতে হবে “মিমি”।