বাংলাদেশের একটি নবাগত ওয়েব প্লাটফর্ম ‘চরকি’তে একটি অ্যান্থোলজি ওয়েব সিরিজ ‘ঊনলৌকিক’ এর প্রথম গল্প ‘মরিবার হলো তার স্বাদ’ মুক্তি পেয়েছে।
আপনারা অনেক ধরনের থ্রিলার দেখেছেন তবে এই গল্পটিকে আপনি পুরোপুরি থ্রিলার বলতে পারবেন না। গল্পটিতে শেষভাগে পরিচালক যে অসাধারণ মোচড় দিয়েছেন তা আপনাদের লাঞ্চ বা ডিনার শেষে শেষপাতে ডেজার্টের মতন লাগবে।
পরিচালক রবিউল আলম রবি কিভাবে এই গল্পটিকে সৃজনশীল নির্দেশনায় জীবন্ত করে তুলেছেন তা এককথায় অসাধারণ।
এই গল্পটির চিত্রনাট্য লিখেছেন তাকদীর খ্যাত লেখক পরিচালক সৈয়দ আহমদ শাওকী এবং পরিচালক রবিউল আলম রবি। ছবির চিত্রনাট্য নিয়ে কোনো কথা হবেনা। এত নিখুঁত ভাবে এই ছবিটির বাঁধন বোনা হয়েছে যে আপনারা দেখলেই মুগ্ধ হয়ে যাবেন।
এই ছবিটিতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন মোস্তফা মন্ওয়ার, গাজী রাকায়েত, সুমন আনোয়ার, নাজিবা বাশার।
এই গল্পটিতে মোস্তফা মন্ওয়ার একজন ‘বর্ডারলাইন পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার’ বা সংক্ষেপে ‘বিপিডি’ তে আক্রান্ত। গল্পটির নাম ‘মরিবার হল তার স্বাদ’ সুতরাং বুঝতেই পারছেন যে তার বারবার আত্মহত্যার মানসিকতা ছিল এবং এই গল্পটি জুড়ে তিনি বহুবার সে প্রচেষ্টায় করেছেন কখনো জোরে গাড়ি চালিয়ে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে মরে যাবার, কখনো গাড়ির মধ্যে গ্যাস চেম্বারের মতন অবস্থা তৈরি করে।

এই গল্পটিতে গাজী রাকায়েত একজন মনস্তত্ত্ববিদ এর চরিত্রে অভিনয় করেছেন। সুমন আনোয়ার একটি হোটেলের হেড শ্যেফ এর চরিত্রে অভিনয় করেছেন। নাজিমা বাসার এখানে মোস্তফা মন্ওয়ার এর স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এখানে প্রত্যেক অভিনেতা-অভিনেত্রী নিজেদের চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করেছেন।
মোস্তফা মন্ওয়ার প্রচন্ড জোরে গাড়ি চালাতে চালাতে যখন একটি কবিতার লাইনগুলো বলছিলেন”এ তুফান ভারী, দিতে হবে পাড়ি, নিতে হবে তরী পার” এবং সেইসঙ্গে তার চোখ মুখের এক্সপ্রেশন আপনাদের গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠবে। ওই মুহূর্তে ওই ধরনের পরিস্থিতিতে তিনি যে এতটা পারফেকশনের সঙ্গে ওই দৃশ্যটি তুলে ধরেছেন তার জন্য সত্যিই তাকে কুর্নিশ জানানো উচিত।
মনস্তত্ত্ববিদ এর চরিত্রে গাজী রাকায়েত অসাধারণ অভিনয় করেছেন। এই গল্পে তার চরিত্রটি কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সুমন আনোয়ারও তার চরিত্রের সঙ্গে একেবারে মিশে গেছেন এবং খুবই স্মার্ট অভিনয় করেছেন।

স্বল্প চরিত্রে নাজিমা বাসার যথেষ্ট প্রশংসনীয় অভিনয় করেছেন।
এই গল্পটি শিবব্রত বর্মন এর একটি গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে।
এই গল্পটির চিত্রগ্রহণে দায়িত্ব সামলেছেন তানভির আহমেদ শোভন। উনি দক্ষতার সঙ্গে যেভাবে এই স্বল্প সময়ের মধ্যে প্রত্যেকটি দৃশ্যকে লেন্স বন্দী করেছেন তার দর্শকেরা দেখে সত্যিই মুগ্ধ হয়ে যাবেন। হলিউডের থ্রিলারধর্মী ছবির দৃশ্য যেভাবে দৃশ্যায়িত হয় এই গল্পটির ক্ষেত্রেও ঠিক একইভাবে তানভির আহমেদ শোভন দৃশ্যগুলিকে দৃশ্যায়িত করেছেন।
রাশিদ শরীফ শোয়েবের আবহসংগীত এই গল্পটিকে এক অন্য মাত্রা দিয়েছে। এই গল্পটির আবহসংগীত চিত্রনাট্যের এবং দৃশ্যায়নের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে মিশে গেছে এবং যার ফলে দৃশ্য এবং আবহসংগীত আপনাকে সেই অনুভূতি গুলি প্রদান করবে যেগুলি আপনারা এই ধরনের ছবিতে খুজে থাকেন কিন্তু পাননা।
এই ছবিটি ‘এ ফিল্ম সিন্ডিকেট প্রোডাকশন’ কর্তৃক প্রযোজিত। এই গল্পটির প্রযোজনা করেছেন সালেহ সোবহান অনীম। নির্বাহী প্রযোজক মীর মোকাররম হোসেন, তানিম নূর এবং রুমেল চৌধুরী।