‘ভাগ্যক্রমে‘ কথাটার মধ্যে অদ্ভুত এক উপলব্ধি রয়েছে। আমাদের প্রত্যেকের জীবনে কোনো না কোনো একটা সময় ভাগ্য একটা নির্ণায়কের ভূমিকা পালন করে। ভাগ্যকে আমরা অনেক সময় ভালোবাসার শেষ অবলম্বন হিসেবে আঁকড়ে ধরে থাকি। ভাগ্যের নিষ্ঠুর পরিহাস এর ওপর আঁকড়ে বেঁচে থাকা এক প্রেমিক যুগলের গল্প হল ‘ভাগ্যক্রমে’ নাটক।
‘ভাগ্যক্রমে’ নাটকে প্রকৃত ভালোবাসা অনেকদিন পর আমরা দেখতে পেয়েছি। এই নাটকটি দেখতে দেখতে অন্তর থেকে সত্যিই ভালবাসার প্রতি আমাদের আরও শ্রদ্ধা বেড়ে যাবে। আমাদের মধ্যে ভালোবাসার গভীরতা এবং বিশ্বাস অনেকটা বেড়ে যাবে।
একজন প্রেমিক তার ভালোবাসার জন্য দিনের পর দিন মাসের পর মাস বছরের পর বছর ধরে অধীর অপেক্ষায় ভাগ্যের উপর ভরসা করে প্রতীক্ষার প্রহর গুনছিল। সেই প্রেমিকের মধ্যে বিন্দুমাত্র রাগ অভিমান কোনকিছুই ছিলনা, ছিল দুচোখ ভরে তাকে দেখতে পাওয়ার একটা আকুল আর্জি তার ভাগ্যের কাছে।
পরিচালক মিজানুর রহমান আরিয়ান পরিচালিত এ বছরের অন্যতম সেরা ঈদ নাটক হল ‘ভাগ্যক্রমে’।
এই নাটকটিতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন জিয়াউল ফারুক অপূর্ব এবং মেহজাবিন চৌধুরী।
অপূর্ব এখানে হাবিবের চরিত্রে এবং মেহজাবিন এখানে নীরার চরিত্রে অভিনয় করেছেন।
স্কুল জীবন থেকেই হাবিব নীরাকে ভালোবাসতো কিন্তু কখনই তা প্রকাশ করতে পারত না। স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে যাবার পর হাবিব এবং নীরা ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় চলে যায়। হাবিবের সেই কথাগুলো অব্যক্তই থেকে যায়। কিছু বছর পর একদিন ট্রেনে হাবিবের সাথে দেখা হয় নীরার। হাবিব নীরাকে চিনতে পারলেও নীরা হাবিব কে চিনতে পারেনি। হাবিব বলতে গিয়েও নীরাকে তার সেই বুকের ভেতর জমে থাকা অব্যক্ত ভালোবাসার ইতিবৃত্ত নীরাকে জানাতে পারেনি সেখানেও। নীরার গন্তব্য রূপনগর স্টেশন, নীরা বেশকিছু এন.জি.ও র সঙ্গে একটি প্রজেক্টে কাজ করার জন্য সেখানে এসেছিল। হাবিবের গন্তব্য অন্যত্র হলেও সে নীরাকে একবারটি তার মনের কথাগুলো বলবার জন্য সেও নেমে পড়ে রূপনগর স্টেশনে। কিন্তু টিকিট চেকার বাদ সাধে। ওই কথায় আছে না ভাগ্যে না থাকলে কিছুই হয় না, ঠিক একই ঘটনা ঘটে হাবিবের সাথে। হাবিব ওই সমস্যা মিটিয়ে স্টেশনের বাইরে বের হয়ে এদিক-ওদিক খোঁজাখুঁজি করেও নীরাকে আর ফিরে পায় না। এরপর শুরু হয় নীরার অপেক্ষা… তবে এই নাটকটির দ্বিতীয় পর্ব আসার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে কারণ এই নাটকের পরিসমাপ্তি স্পষ্টভাবে হয়নি।
এই নাটকটিতে অপূর্ব এবং মেহজাবিন অসাধারণ অভিনয় করেছেন। বিশেষ করে একটি দৃশ্যে যেখানে অনেক অপেক্ষার পর হাবিব(অপূর্বের চরিত্রটির নাম) নীরাকে(মেহজাবিনের চরিত্রটির নাম) দেখতে পায় তার সেই আনন্দ মিশ্রিত ভারী ভারী গলায় তাঁর সেই সংলাপগুলি শুনলে আপনি নিজেও সেই অনুভূতি গুলি অনুভব করতে পারবেন। সুক্ষ সুক্ষ অনুভূতি গুলি কে এই দুইজন অভিনেতা-অভিনেত্রী যেভাবে পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। অনেকদিন পর একটি নিখাঁদ ভালোবাসার গল্প আমরা দেখতে পেলাম।
‘ভাগ্যক্রমে’ নাটকের অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন উজ্জ্বল মাহমুদ, সৈয়দ মনির।
ভাগ্যক্রমে নাটকটির গল্প লিখেছেন সোহেল রহমান এবং মিজানুর রহমান আরিয়ান।
এই নাটকটির চিত্রনাট্য লিখেছেন যোবায়েদ আহসান।
‘ভাগ্যক্রমে’ এক অব্যক্ত ভালোবাসার ইতিবৃত্ত….
