ওয়েব প্লাটফর্ম ‘চরকি’র ‘ঊনলৌকিক’ ওয়েব সিরিজের দ্বিতীয় পর্ব ‘ডোন্ট রাইট মি’ : বাস্তব বনাম অবাস্তবের মানসিক দ্বন্দ্ব।

প্রতিটি ছবি সেটি পূর্ণদৈর্ঘ্যের হোক বা স্বল্পদৈর্ঘ্যের হোক অথবা ওয়েব সিরিজ শুরু হবার আগে একটি ডিসক্লেইমার যায়- এই গল্পের সমস্ত চরিত্র ঘটনা স্থান-কাল-পাত্র কাল্পনিক, এর সাথে বাস্তবের কোন মিল নেই। যদি এমন কোনো মিল থাকে তা নিছকই কাকতালীয় এবং অযাচিত।
আর ঠিক এই ঘটনাটা যদি কোন একজন মানুষের সাথে হয়ে থাকে তাহলে কি করবে? আপনারা হয়তো ভাবছেন আমি ঠাট্টা করছি না আমি মোটেই ঠাট্টা করছি না। বাস্তবে এটাই ঘটেছে।

‘ডোন্ট রাইট মি’ গল্পের একটি দৃশ্যে অভিনয়রত সোহেল মন্ডল।


বাংলাদেশের জনপ্রিয় ওয়েব প্লাটফর্ম ‘চরকি’ ‘ঊনলৌকিক’ ওয়েব সিরিজের দ্বিতীয় গল্প ‘ডোন্ট রাইট মি’ তে ঠিক এমনই ঘটনা ঘটেছে।
এই ২৩ মিনিটের গল্পটি আমির হোসেন নামে এক ব্যক্তির। আমির জীবনের প্রথম দিকে একটি দুষ্কৃতী চক্রের সঙ্গে যুক্ত ছিল কিন্তু পরে সে একটি বিশেষ কারণে সেইখান থেকে পালিয়ে ঢাকায় চলে আসে। ঢাকায় এসে সে একটি ফটোকপির দোকানে কাজ করে। ফটোকপি করতে করতে তার চোখ পড়ে একটি ম্যাগাজিনের একটি পাতার উপর। ওই ম্যাগাজিনটি হলো ১৯৮১ সালের ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্রদের লেখা ম্যাগাজিন ‘কুহক’। যেই পাতাটির ওপর আমিরের চোখ পড়ে সেই ছোট গল্পটির নাম ছিল আমিরের দিনরাত্রি এবং লেখক এর নাম ছিল ফরহাদ মাহমুদ। আমি নিজের ফটোকপি করার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লেও পড়েছে ওই ছোট গল্পটি পড়ে এবং বুঝতে পারে তার ব্যক্তিগত জীবনের সঙ্গে এই গল্পটি একেবারে মিলে গেছে। আমিরের মনে সন্দেহ হয় তার মনে দুশ্চিন্তা দেখা দেয়। এরপর সে অনেক চেষ্টা চরিত্র করে ডক্টর ফরহাদ মাহমুদ এর ঠিকানা যোগাড় করে এবং তার বাসায় যায়। সেখানে গিয়ে আমির ডঃ ফরহাদ কে জিজ্ঞেস করে যে সে আমিরকে চেনে কিনা কিন্তু ডাক্তার ফারহাদ বলেন যে আমিরকে জীবনে এই প্রথম দেখছি তাই তার সম্বন্ধে কোন কিছুই জানেন না। তাছাড়াও তিনি এই গল্পটি প্রায় ৩০ বছর আগে লিখেছেন আমিরের কাছ থেকেও তিনি জানতে পারেন যে আমিরের বর্তমান বয়স ২৮ বছর। এরপর আমিন ডক্টর ফরহাদ কে বলেন তাঁর গল্পের বাকি অংশটুকু লিখতে এবং অনেক জোরদার করার পরই ডক্টর ফরহাদ তাঁর গল্পের বাকি অংশটুকু লিখতে বাধ্য হন। তাঁর গল্পের বাকি অংশটুকু আমিরের ব্যক্তিগত জীবনের সাথে কিভাবে একাত্ম হয় গল্পটি দেখলে আপনারা বুঝতে পারবেন।
আমির হোসেনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন সোহেল মন্ডল রানা যিনি ‘তকদীর’ ওয়েব সিরিজে অসাধারণ অভিনয় করেছেন। ডোন্ট রাইট মি গল্পে আমির হোসেনের চরিত্রে তিনি দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন। তার অভিনয় এতটাই নিখুঁত ছিল যে দর্শকেরা দেখে সত্যিই আশ্চর্য হবেন।
এই গল্পটিতে ডক্টর ফরহাদ মাহমুদের চরিত্রে অভিনয় করেছেন বাংলাদেশের কিংবদন্তী অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর। তার অভিনয়ের কথা নাইবা বললাম। বাংলাদেশের দিকপাল সমস্ত অভিনেতাদের মধ্যে তার নাম প্রথম সারিতেই আসে। তার সাবলীল অভিনয়, অভিব্যক্তি, শরীরী ভাষা সবকিছু মিলে এক অনবদ্য অভিনয় শৈলী। প্রতিটি দর্শকের কাছে তা সত্যিই এক ভিজুয়াল ট্রিট। তিনি এতটাই নিখুঁত অভিনয় করেন এবং সেটি এতটাই সাবলীলভাবে ভাবে করেন যে দর্শকেরা দেখে বাস্তব আর কল্পনার মধ্যে তফাৎ করতে পারবেন না।
রোকেয়ার চরিত্রে ফারহান আহমেদ এক কথায় অসাধারণ। এই গল্পের শেষের দিকের একটি দৃশ্যে তার শরীরী ভাষা অভিনয় দেখে আপনাদের চোখ থেকে জল চলে আসবে।
এই পর্বটির লিখেছেন নেয়ামত উল্লাহ মাসুম, শিবব্রত বর্মন এবং পরিচালক রবিউল আলম রবি। চিত্রনাট্য নিয়ে কোন কথাই হবে না। প্রথম পর্ব, দ্বিতীয় পর্ব দুটি এক কথায় অসাধারণ। কোন ত্রুটি বিচ্যুতি নেই এর মধ্যে। সাইকোলজি অর্থাৎ মানুষের মনস্তাত্ত্বিক দিক নিয়ে তারা যেভাবে কাজ করেছেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়।
এই গল্পটির চিত্রগ্রহণের দায়িত্ব সামলেছেন বরকত হোসেন পলাশ। এই গল্পটির প্রতিটি দৃশ্যগুলিকে তিনি যেভাবে লেন্স মধ্যে করেছেন তা এককথায় অসাধারণ।

‘ডোন্ট রাইট মি’ গল্পের একটি দৃশ্যে অভিনয় রত কিংবদন্তি অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর এবং সোহেল মন্ডল।


এই গল্পটির সঙ্গীত এবং আবহসংগীত পরিচালনা করেছেন রাশিদ শরীফ শোয়েব।এই গল্পটির আবহসংগীত চিত্রনাট্যের এবং দৃশ্যায়নের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে মিশে গেছে এবং যার ফলে দৃশ্য এবং আবহসংগীত আপনাকে সেই অনুভূতি গুলি প্রদান করবে যেগুলি আপনারা এই ধরনের ছবিতে খুঁজে থাকেন কিন্তু পাননা।
ধন্যবাদ জানানো উচিত পরিচালক রবিউল আলম রবি কে এই ধরনের মনস্তাত্ত্বিক, বাস্তবধর্মী গল্প নির্ভর সিরিজ নির্মাণ করার জন্য। পরিচালক হিসেবে তিনি সত্যিই অসাধারণ কাজ করেছেন। দুটি গল্পে তিনি আলাদা করে মনস্তাত্ত্বিক অভিব্যক্তিকে প্রকাশ করেছেন।
এই ছবিটি ‘এ ফিল্ম সিন্ডিকেট প্রোডাকশন’ কর্তৃক প্রযোজিত। এই গল্পটির প্রযোজনা করেছেন সালেহ সোবহান অনীম। নির্বাহী প্রযোজক মীর মোকাররম হোসেন, তানিম নূর এবং রুমেল চৌধুরী।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x